জেলখানার চিরকুট
অতীতে হক্কানি উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন কারণে কারাগারে বন্দী হয়েছেন। তাঁদের অপরাধ তাঁরা কেন অত্যাচারি শাসকের জুলুমের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী জনগনের পক্ষে কথা বলে। তাঁরা কেন কুরআন সুন্নাহর বিপরীত আইন করলে প্রতিবাদ করে। এই কারণেই তাঁদের গ্রেফতার হতে হয়েছে এবং সহ্য করতে হয়েছে ক্ষমতার দম্ভে আটকে থাকা শাসকগোষ্ঠির নির্মম অত্যাচার।
কিন্তু হক্কানি উলামায়ে কেরাম দমে যাওয়ার পাত্র নন, বন্দিজীবনকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা ইসলামের খেদমত করেছেন। কেউ কারাগারের বন্দীদের মধ্যে ইসলামের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। কেউ আবার লেখালেখির মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের বুদ্ধিবৃত্তিক পথ মসৃণ করে গেছেন। অনেকে পবিত্র কোরআনের তাফসির বা ব্যাখ্যা গ্রন্থও লিখেছেন। অনেকে আবার হাদিসের সতন্ত্র কিতাব লিখেছেন যা ইতিহাসের সোনালি অধ্যায়ে আজও লিপিবদ্ধ আছে।
আকাবিরদের অনুসরণই আমার লেখার প্রেরনা ও সাহস যুগিয়েছে। আল্লাহর সহায়তায় লিখতে শুরু করলাম জালেম শাসকগোষ্ঠির জুলুমের ফেহরেস্ত যদিও আমি অতি নগন্য। তবুও আকাবিরদের মিছিলে শামিল হতে চাই। সাক্ষি হতে চাই জালেমশাহীর জুলুমের। জানি এ পথ বড়ই কন্টকাকীর্ণ এ পথে নেই কোন সাহায্যকারী আল্লাহ ছাড়া। এক্ষেত্রে সবথেকে বেশি সাহস ও উদ্দিপনা যুগিয়েছেন প্রিয় আস্থাভাজন উস্তাদে মুহতারাম মুফতি হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমি ও মুফতি মুনির হুসাইন কাসেমি। আল্লাহ তায়ালা তাঁদের স্নেহের ছায়াকে আরো দীর্ঘায়িত করুন।
১৭ই রমজান ৩০ শে এপ্রিল-২০২১ ইং রাত আনুমানিক ৩.টায়, বিপুল সংখ্যক সরকারী বাহিনি (পুলিশ) এসে মাদ্রাসা ঘেরাও করে আমাকে নিয়ে যায় উত্তরা পশ্চিম থানায়। সেই থেকে শুরু জালেমের জুলুমের সূচি। কি অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে! নবীর ওয়ারিস উলামায়ে কেরামের সাথে তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। আহত হৃদয়ে শুধু আল্লাহর কাছে আরজি তিনি যেন তাদের সঠিক পাওনা বুঝিয়ে দেন।
কবির ভাষায়:نہ چین پاوے گا تو بھی ظالم، کسی کا حق خراب کر کے ؟ یاد رکھنا کہ لیگا بدلہ ، جناب باری حساب کر کے .প্রত্যেক জালেম শাসকগোষ্ঠির জেনে রাখা দরকার জুলুমের শেষ পরিনতি খুবই ভয়াবহ! আর সেই জুলুম যদি হয় আল্লাহর ওলীদের সাথে তাহলে তো ধ্বংস অনিবার্য। কেননা আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন:من عادى لي وليا، فقد آذنته بالحرب যে আমার বন্ধুর (ওলী) সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধঘোষণা করি। কোন জালেমের যদি আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা থাকে সে যেন প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেরাউন, নমরুদ, হামান, আবু জাহেল, উতবা শাইবার মত।
পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কেউ আল্লাহ তায়ালার সামনে টিকে থাকতে পারেনি সুতরাং জালেম সরকার আওয়ামিলীগও বেশি দিন ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকতে পারবে না। তারদের পরাজয় হবে খুবই ভয়াবহ ও শোচনীয় যা যুগ যুগ ধরে মানুষ স্বরণ রাখবে। নবীর ওয়ারিস উলামায়ে কেরামের রক্ত ঘাম পৃথিবীর যে ভুখন্ডে ঝরেছে সে ভুখন্ড আল্লাহ তায়ালা জালেমশাহীর নাপাক পদচারণ থেকে মুক্ত করেছেন। আর জালেমশাহীর তখত-তাউস ভুলণ্ঠিত করেছেন।
ইতিহাস সাক্ষী যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহন করে তারা বুদ্ধিমান। আর যারা ইতিহাসের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে সামনে যেতে চায় তারা পদে পদে বিপদের সম্মুখীন হয়। আসলে আমি এই পাণ্ডুলিপিতে শুধু কারাবন্দী উলামায়ে কেরামের দৈনন্দিন আমলগুলো জাতির সামনে আনতে চেয়েছি। জাতির সূর্যসন্তান উলামায়ে কেরাম জেলখানায় তাঁদের দুঃখের দিনেও কি আল্লাহ তায়ালাকে স্বরণ রেখেছে কি না তা জাতিকে জানানো উদ্দেশ্য। আর এ থেকে সকলেই শিক্ষাগ্রহন করুক যে, সর্বাবস্থায়আল্লাহকে স্বরণে রাখা প্রত্যেকের জন্য অতিব জরুরী। আহ্ কি জুলুম!
বইয়ের নাম | জেলখানার চিরকুট |
---|---|
লেখক | মুফতি ফয়জুল্লাহ আমিন কাসেমী (কিবরিয়া) |
প্রকাশনী | ফুলদানী প্রকাশনী |
সংস্করণ | প্রথম প্রকাশ, ২০২৪ |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | 256 |
ভাষা | বাংলা |