নববি তরবিয়ত (নবিজি যেভাবে সন্তান লালন-পালন করেছেন)
ইসলামি ইতিহাসের পাতায় যেসব মহামানব নিজেদের নাম সোনার হরফে লিখে নিয়েছেন, বরিত হয়ে আছেন উম্মাহর হৃদয়ে ভক্তি ও শ্রদ্ধার স্বর্ণ-আসনে, তাদের এই 'মহান' হয়ে ওঠার পিছনে বিরাট অবদান রেখেছে শৈশব ও কৈশোরের নিখুঁত পরিচর্যা এবং সঠিক পথনির্দেশ। মা, বাবা, উস্তায ও মুরুব্বির সযত্ন তত্তাবধান তাদের এগিয়ে দিয়েছে সাফল্যের গন্তব্যে বহুদূর পথ।
বড়দের 'বড়' হয়ে ওঠার সেসব গল্প লিখা আছে ইতিহাসের পাতায় পাতায় সোনার হরফে।
কোনো শিশুই আজন্ম বিদ্বান নয়। বুঝ-বুদ্ধির পক্কতা নিয়ে কেউ জন্মায় না। তারা জন্মে 'ফিতরাত'র উপর। সত্যের আলো গ্রহণের জন্য নিষ্কলুষ হৃদয় থাকে প্রতিটি শিশুর বুকে। তাওহিদের আলোয় সে হৃদয়কে উদ্ভাসিত না করলে কুফরের অন্ধকার ধীরে ধীরে তাকে কলুষিত করবে। যদি অযত্ন-অবহেলার কারণে শিশুর শুভ্র হৃদয়ে পাপের ছোপ ছোপ কালি পড়ে আর অন্ধকারের পথ মাড়িয়ে সে পৌঁছে যায় জাহান্নামের দোরগোড়ায় তাহলে আল্লাহর সমীপে তার আরয হবে-
"হে আমাদের পালনকর্তা! যেসব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয়।" -সুরা হা-মীম আস সাজদাহঃ২৯
সুতরাং শিশু-সন্তানের তারবিয়্যাতে অযত্ন-অবহেলার সুযোগ মোটেও নেই।
একটি শিশু যখন পৃথিবীর বুকে চোখ মেলে তখন তার হৃদয়-মগজ থাকে একেবারে নিষ্কলুষ। যেন এক মসৃণ ক্যানভাস। অভিভাবক তাতে নির্বিঘ্নে আঁকতে পারেন যেকোনো আল্পনা। তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলতে পারেন সুন্দর-অসুন্দরের কল্পনা। তাই দেখা যাবে, কোরআনের সুমিষ্ট মধু ঝরে পড়ছে কোনো পুষ্পকলির মুখে আবার কোনো কলিমুখ মলিন হয়েছে অশ্রাব্য গানের হলাহলে! জীবনবোধে অজ্ঞ সাত বছরের এক শিশু, পাথর হাতে তেড়ে যাচ্ছে দখলদার ট্যাঙ্কের বিরুদ্ধে কি অসীম সাহসে! আবার আহ্লাদে পোষা আরেক দুলাল, তেলাপোকা দেখে চিল্লিয়ে বাড়ি মাথায় তুলেছে নির্বিশেষে! হ্যাঁ, এসবই সেই মানস-ক্যানভাসে আঁকা আল্পনার প্রতিবিম্ব।
একটি শিশুর জন্ম মানে মানুষের সমাজে নতুন এক সদস্যের আগমন। সেই আগমনকে উপলক্ষ করে ইসলাম সাজিয়ে দিয়েছে বেশ কিছু কর্মসূচি। রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে বলে এবং করে করে সেসব দেখিয়েছেন সবিস্তারে। সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম নিজ সন্তানদের গড়ে তুলেছেন তাঁরই প্রত্যক্ষ নির্দেশনায়। তাঁর সযত্ন তত্তাবধানেই গড়ে উঠেছিল ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মাহ; স্বর্ণ যুগের সোনালী মানুষগুলো।
মানব বাগানের পুষ্পকলিদের জন্য কেমন ছিল দরদী সেই মালীর পরিচর্যা!
কিভাবে যত্ন নিতেন তিনি!
কেমন মায়া আর ভালবাসায় শিশুদের শুভ্র হৃদয়ে বুনতেন তাওজিদের বীজ!
কত সুন্দর করে শেখাতেন জীবনের বোধ, বেঁচে থাকার মর্ম!
আপনার হাতের এ বইয়ের প্রতিটি পাতায় পেয়ে যাবেন এসব বিষয়ের বর্ণিল উপস্থাপন।
'আতফালুল মুসলিমীন কাইফা রাব্বাহুমুন নাবিয়্যুল আমীন', শায়খ জামাল আব্দুর রহমান বিরচিত অসাধারণ এ বইটির পরতে পরতে ফুটে উঠেছে মুসলিম শিশুর প্রতিপালনে কী ছিল রাসুলের 'উসওয়াহ', কেমন ছিল তাঁর কর্মকৌশল, কি-ই বা ছিল তাঁর সুন্নাহ।
প্রিয় পাঠক, বাংলা তো বটেই আরবিতেও এ বিষয়ে এমন বই খুব একটা চোখে পড়ে না। কোরআনের আয়াত এবং সহিহ হাদিস ও আছারের ব্যাপক সন্নিবেশ বইটিকে নিয়ে গেছে গ্রহণযোগ্যতার অনন্য উচ্চতায়। আরব বিশ্বে বইটি এতটাই সমাদৃত যে পাঠকের চাহিদা পূরণ করতে প্রকাশের এক বছরেই ছাপতে হয়েছে চার চারটি সংস্করণ। বইটি পড়ার পর আপনিও বলে উঠবেন, শিশুর পরিচর্যায় ইসলামের নির্দেশনা এত নিখুঁত! এতটা ব্যাপক! মনে হবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে আপনাকে গাইড করছেন সন্তানের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয়! আদর্শ মানুষরূপে গড়ে তুলতে কতটা যত্ন নিতে হয়!
সামাজিক অবক্ষয় ও চারিত্রিক অধঃপতনের এই যুগ; যখন প্রাপ্ত বয়সে পা দেয়ার আগেই শিশুরা হারিয়ে ফেলছে চারিত্রিক শুভ্রতা, অস্থির-অশালীন পরিবেশ কলুষিত করছে তাদের স্বভাবজাত কোমলতা, তখন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনি পেরেশান হবেন, অস্থিরতায় ছটফট করবেন এটাই স্বাভাবিক।
এক্ষেত্রে বইটি কিছুটা হলেও আপনার হৃদয়কে উপশম দিবে, আপনার পেরেশানি প্রশমিত করবে ইনশাআল্লাহ। একজন সচেতন এবং সতর্ক অভিভাবক হিসেবে বইটি প্রত্যেকের সংগ্রহে থাকা উচিত।
পরিশেষে কামনা একটাই, রাসুলের গাইড অনুসরণে আপনার করা তারবিয়্যাতে স্বপ্নের সন্তান বেড়ে উঠুক উম্মাহর সম্পদরূপে। হয়ে উঠুক 'মুত্তাকিদের ইমাম', যামানার রাহবার এবং ইসলামের অতন্দ্র প্রহরী। আল্লাহ সুবনাহু ওয়া তাআলা কবুল করুন। আমীন।
বইয়ের নাম | নববি তরবিয়ত (নবিজি যেভাবে সন্তান লালন-পালন করেছেন) |
---|---|
লেখক | শাইখ জামাল আবদুর রহমান মাওলানা রুহুল আমিন উবাইদি |
প্রকাশনী | সীরাত পাবলিকেশন |
সংস্করণ | প্রথম প্রকাশ, ২০২২ |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | 240 |
ভাষা | বাংলা |