এসো কলম মেরামত করি
ভাষাশিক্ষা ও সাহিত্যচর্চার বিভিন্ন স্তর রয়েছে। আমি বলি না যে, প্রতিটি তালিবে ইলমকে ভাষা ও সাহিত্যের সর্বোচ্চ স্তর অর্জন করতে হবে, বা সবাইকে ভাষাবিদ ও সাহিত্যিক হতে হবে। আমি বলি, ভাষা ও সাহিত্য সবাইকে শিখতে হবে, তবে প্রত্যেকের স্তর হবে আলাদা। একেবারে প্রাথমিক স্তর হলো বানান ও ব্যাকরণের বিশুদ্ধতা। এটা আমাদের সবার জন্য অপরিহায। কোন তালিব ইলম মাতৃভাষার বানানে বা ব্যাকরণে ভুল করে মানুষের সামনে লজ্জিত হবে, এটা কল্পনাও করা যায় না।
দ্বিতীয় স্তর হলো কোন বিষয় স্বাভাবিকভাবে লিখতে ও বলতে পারা। সাহিত্যের মানে উন্নীত না হোক, বিশুদ্ধ অবশ্যই হতে হবে। যারাই কিছু লিখতে চায়, হোক তা মৌলিক বা অনুবাদ এবং হোক পত্রপত্রিকা বা বইপত্র, এ যোগ্যতা তাদের অবশ্যই অর্জন করতে হবে, যা দুঃখজনভাবে আমাদের নেই। তাই জাফর ইকবালের মত একজন লেখক বলতে সাহস পান যে, শুদ্ধ ভাষায় লেখা কোন ধর্ধীয় বই নযরে পড়েনি।ভদ্রলোকের মন্তব্যটা সন্দেহ নেই অতিশয়তাদোষে দু্ষ্ট, কিন্তু কথাটা বলার সুযোগ তিনি পেয়েছেন। ভাষার ক্ষেত্রে এরূপ দৈন্য থাকা অবস্থায় সমাজে মযাদার আসন লাভ করা সত্যি কঠিন।
তৃতীয় স্তর হলো মুখের ভাষা ও কলমের লেখা সাহিত্যের মানে উত্তীর্ণ হওয়া। আমার মতে অন্তত দশভাগ আলিমের এ যোগ্যতা থাকা উচিত। তাহলে ভাষা ও সাহিত্যের জগতে আলিমসমাজকে কেউ আর অবজ্ঞার চোখে দেখতে পারবে না। পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানে আলিমসমাজ বহু আগেই এ যোগ্যতা অর্জন করেছেন। তাই তাদের বক্তব্য সমাজকে গুরুত্বের সঙ্গে শুনতে হয়। কিন্তু আমরা কি এ পযায়ে উপনীত হতে পেরেছি? পারিনি, এর কাছাকাছিও যেতে পারিনি।
চতুর্থ স্তর হলো ভাষা ও সাহিত্যের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা। অর্থাৎ বাংলাভাষা ও সাহিত্যে আমাদেরকে এমন মৌলিক অবদান রাখতে হবে, যাতে দেশের বিদ্বান-সমাজ এক্ষেত্রে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়। ভাষা ও সাহিত্য-বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত যেন আমাদের মতামত ছাড়া গ্রহণ করার সাহস কারো না হয়। আমি মনে করি, বাংলাভাষার এমন যোগ্যতার অধিকারী অন্তত দশজন আলিম থাকা উচিত। বাংলাভাষা ও সাহিত্যের জন্য তারা তাদের যিন্দেগি ওয়াকফ করে দেবেন। ‘কাদেসীয় ও ইয়ারমুকি’ জাযবা ও প্রেরণা বুকে ধারণ করে সাহিত্যের রণাঙ্গনে অবতীর্ণ হবেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন একজনও আলিম বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে এখনো আসেননি। আমার বারবার মনে পড়ে, এদেশের আলিমসমাজের উদ্দেশ্যে হযরত আলী নদবী (রাহ)-এর সেই জ্বলন্ত প্রশ্নটি, ‘আপনাদের’ মধ্যে এখনো কেন একজন ‘ট্যাগোর’ পয়দা হলো না?
‘এসো কলম মেরামত করি’ বইটি এ পথে আমাদেরকে অনেক দূর নিয়ে যাবে, এ কথা বলার মূর্খতা আমার নেই। আমি শুধু বলতে চাই, বইটি যদি সবাইকে যার যার স্তরমত কিছুমাত্র সাহায্য করতে পারে তাহলেই আমি খুশী। সর্বোপরি যদি অন্তত দশজন তরুণের হৃদয়ে ঐ স্বপ্নসাহসটা জাগিয়ে তুলতে পারে তাহলেই আমি সফল।
-মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ
বইয়ের নাম | এসো কলম মেরামত করি |
---|---|
লেখক | মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ (আদীব হুজুর) |
প্রকাশনী | দারুল কলম |
সংস্করণ | 1 2010 |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | 350 |
ভাষা | বাংলা |