আসমান
“আসমান” বইটির ফ্ল্যাপের কথাঃ
আমেরিকার কুখ্যাত জেল গুয়ানতানামাে বে থেকে বিনা বিচারে ১২ বছর জেল খেটে মুক্তি পেয়েছে এক বাংলাদেশি। ওয়াশিংটন পােস্টের এই খবরে চমকে গেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সাফ জানিয়ে দিয়েছে এমন সন্ত্রাসীর দায়িত্ব বাংলাদেশ নেবে না। আমেরিকান আর্মির কার্গো প্লেন তাকে ফেলে গেছে আলবেনিয়ার তিরানা বিমান বন্দরে । ট্রাভেল ডকুমেন্টহীন দেশহীন মানুষটাকে পৃথিবীর কোনাে দেশ রাজনৈতিক আশ্রয় দেয় না। রিফিউজির স্ট্যাটাস নিয়ে তাকে থাকতে হবে রেডক্রসের শেল্টারে।
মানুষটা এখন কোথায় যাবে? চেনা সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলে, একটা অচেনা দরজা খুলে যায়, জীবন বন্দি হয়ে গেলে সেটা জীবনকেও ছাপিয়ে যায়, সেই জীবনের গল্প জীবনের চেয়েও বড় হয়ে যায়… The Fiction Based on Fact এই উপন্যাসের স্থান সত্য, কাল সত্য, ইতিহাস সত্য, কাল্পনিক শুধু এর চরিত্রগুলাে।
বইটির প্রথম অংশের কিছু কথাঃ
সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ ‘হৃদয় আল্লাহর ঘর। মানুষের হৃদয়টা তৈরি করা হয়েছে এই জন্য যে সেখানে শুধুমাত্র আল্লাহ থাকবেন। সে ঘরে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু ঢুকালেই শুরু হবে তােমার জাগতিক অশান্তি। | ধানমন্ডি আট নম্বর রােডের জামে মসজিদের বৃদ্ধ পেশ ইমাম মাওলানা ইসহাক আব্দুর রহমান কথাগুলাে বললেন ধীরস্থির আর অনুচ্চ শব্দে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আছরের আজান হবে, তিনি প্রস্তুত হয়ে বসে আছেন। তার নজর একটি আরবি কিতাবের দিকে। মাথার ওপরে ঘুরছে পুরাতন ফ্যান। সেই ফ্যানের বাতাসে সাদা কাশফুলের মতাে তিরতির করে কাঁপছে তার দীর্ঘ দাড়ি। সেপ্টেম্বরের শেষ দুপুর, প্রায় নীরব ধানমন্ডির রাস্তা দিয়ে বিক্ষিপ্ত বেল বাজিয়ে চলে যাচ্ছে একটা রিকশা। এরপর গুমােট নীরবতা, যেটা ধীরে ধীরে অস্থির করে তুলল ওমার রিজওয়ানকে। শুধুমাত্র নীরবতাটাকে ভেঙে দেওয়ার জন্য ওমার প্রশ্ন করল | ‘আমার মনে অশান্তি আপনি কীভাবে বুঝলেন?
এই প্রশ্নে বৃদ্ধ ইমামের চোখে-মুখে ছড়িয়ে পড়ল একটা সহে হাসির দ্যুতি। ‘বেশ কিছুদিন ধরে আমি তােমাকে মসজিদের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখছি কিন্তু তােমাকে জামাতের নামাজে দেখি না।
‘আর তাতেই আপনার মনে হলাে আমার মনে অশান্তি? এই বেপরােয়া তরুণটির সাথে কথা বলতে কেমন যেন ভালাে লাগছে ইমাম সাহেবের। তরুণটি তাকে একবারও হুজুর সম্বােধন করেনি। তাই একটু মজার ছলে বললেন | ‘তিন ধরনের লােক মসজিদের আশেপাশে ঘুরঘুর করে। ফকির, জুতা চোর আর মজনু। তুমি হলে মজনু শ্রেণির লােক। এই ইমাম লােকটির মধ্যে পিরালী কিংবা বুজুর্গি দেখানাের কোনাে প্রচেষ্টা নেই, কথা বলছেন খুব সাধারণ কিন্তু বিচক্ষণ মানুষের মতাে ইমামের গাম্ভীর্য।
সারাংশ
ওমার- হৃদয়ঘটিত কারণে যে যুবক হতাশার অতল সমুদ্রে হারিয়ে গিয়ে মজে যায় নেশার ধ্বংসাত্মক দুনিয়ায়। তার জীবনে ইসলাম কেমন করে পরিবর্তন আনে। হয়ে ওঠে ধর্মপ্রাণ মুসলমান। ঢাকার বিশেষ কিছু কুখ্যাত অলিগলি যার নখদর্পণে সে কেন আফগানিস্তানের যুদ্ধের মাঠে। যার খেসারত দিতে হয় ১২ বছর কুখ্যাত গুয়ান্তানামো বে কারাগারে বিনা বিচারে জেল খেটে- অকথ্য নির্যাতন সহ্য করে। কিন্তু পরম করুণাময় কি এতই নিষ্ঠুর যে তার জীবন কে এক বিয়োগ গাঁথা হিসেবেই লিখবেন? না- তিনি পরম করুণাময়, প্রত্যেকের জন্য যিনি রেখেছেন উত্তম প্রতিদান। তাই উপন্যাসের শেষে ওমার যেন এক মুক্ত বিহঙ্গ- সে খুশি এক আসমান ভালবাসা নিয়ে। কোন অন্ধ বুলি নয়। তীক্ষ্ণ যুক্তি দিয়ে গড়া ধর্ম ইসলাম। ইসলামের দর্শন নিয়ে আমরা কমই ভাবি। উপন্যাসটি আপনাকে ভাবাবে। আছে রক সংগীতের গল্প, ঢাকার অলি গলির গল্প। এবং শেষে অপ্রত্যাশিত চমক।
বইয়ের নাম | আসমান |
---|---|
লেখক | লতিফুল ইসলাম শিবলী |
প্রকাশনী | নালন্দা |
সংস্করণ | প্রথম প্রকাশ, ২০১৯ |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | 152 |
ভাষা | বাংলা |