বিরহী বাতাস বহে শুধু তোমার জন্যে
মারিয়া চেয়েছিল যে ভুলটা সে নিজে একদিন করেছিল সেই ভুলটা যেন তার মেয়ে না করে। মারিয়া তার জীবন দিয়ে বুঝতে পেরেছিল নারী মানেই অবহেলার পাত্রী। সে চেয়েছিল নিজের করা ভুলকে শুধরে নিয়ে স্বয়ম্ভর হয়ে বাঁচতে। যাদের জীবন হয় অনির্ভরশীল। যাদের জীবন সাজাতে প্রয়োজন পড়ে না কোন পুরুষের। তারা বাঁধেনা কোন সংসার। তাদের প্রয়োজন নেই কোন সন্তানের।
মারিয়া ধরেই নিয়েছিল তার অনাহুত কন্যা তামারা হবে তেমনই একজন স্বয়ম্ভরা। স্বয়ম্ভরারা হয় আত্মনির্ভরশীল। স্বয়ম্বরাদের মত নয়। যারা ধরেই নেয় মনমত বর বাছাই করতে পারা একটা বাহাদুরি কিংবা হাজারো আশিকের মধ্য হতে বয়ফ্রেন্ড পছন্দ করতে পারা একটা যোগ্যতা।
এগুলোর মধ্যে যে আসলে কোন কৃতিত্ব নেই তা স্বয়ম্বরাদের জ্ঞানে কুলোয় না। তারা অনেক পরে বোঝে যে আসলে দিনশেষে সবাই লুটেরা। তারা নিজেদের ভাগ বুঝে নিয়ে চম্পট। যে পুরুষদের মানসিকতা এত হীন তাদের সাথে লেনদেন হবে সাময়িক। কাজেই ফেল কড়ি মাখ তেল। কিসের ভালবাসা আর কিসের সংসার।
সেই বোধ থেকেই মারিয়া চেয়েছিল মেয়েকে অসূর্যাস্পর্শা করে রাখবে। তার গায়ে লাগতে দেবেনা কোন মালিন্য। গভীর কষ্টের তোড়ে মারিয়ার বুঝতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল নারী বা পুরুষের দৃশ্যমান অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতই অদৃশ্যমান কিছু প্রত্যঙ্গ থাকে যার একটির নাম প্রেমানুভূতি। যেটি চোখে দেখা না গেলেও তার উপস্থিতি ভীষণ ভাবে আক্রান্ত করে মানুষকে। কেবল প্রশ্বাস নেয়া আর নিঃশ্বাস ফেলাই অনুভূতির সমার্থক নয়। তার সাথে মিশে থাকা কিছু সময়ের পরিক্রমা যা ফেলে দেয়া নিঃশ্বাসকে দীর্ঘশ্বাস আর টেনে নেয়া প্রশ্বাসকে আত্মবিশ্বাস নাম দিয়ে থাকে।
এটা মারিয়ার উপলব্ধিতে ছিল না। সেকারণেই হয়ত মেয়ের আচমকা অপ্রতিরোধ্য বেগবান ভালবাসার ব্যপারে সে খড়গহস্ত ধারণ করে। জীবনকে মনগড়া সংজ্ঞায় পরিচালিত করতে গিয়ে নিজেরই স্বরচিত বিধানকে কখনও সাদা কখনও রঙীন রূপে রাঙাতে চাওয়া মারিয়া একসময় জানতে পারে জীবন কেবল জীবিকার নাম নয়, জীবন জৈবিক চাহিদারও। মানুষ পশু নয় যে সর্বত্র খাদ্যের অন্বেষণ মুখ গুঁজবে, জিভ নাড়বে আর সুযোগ পেলেই ভোগ করবে। মানুষ এমন একটি প্রাণী যার বিশেষত্বই তার মনুষ্যত্ব। যা তাকে বাকি প্রাণী থেকে পৃথক করে। মানুষের জীবনে ভোগ বলে কোন শব্দের আশ্রয় নেই বরং সে যা অধিকার করে তার সবটাই উপভোগ।
নব্বই দশক আর একবিংশ শতাব্দীর পৃথক দুটি জীবনপ্রবাহকে সমান্তরালে তুলে ধরার একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস চালানো হয়েছে এই গল্পে। এই উপন্যাসের কাহিনী, স্টাইল, জীবনদর্শন, শ্লীলতা অশ্লীলতার সীমারেখা– সবই নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপিত করার মৃদু চেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের প্রতি আসক্তি আর তার ভেতর লুকিয়ে থাকা বিতৃষ্ণাকে তুলে ধরার দুর্বল আর প্রানান্তকর চেষ্টা চলেছে উপন্যাসের সর্বত্র। অরৈখিক নিয়মে লেখা উপন্যাসটি লেখকের জন্য একটি জটিল অভিজ্ঞতাও বটে। আশা করা যায় লেখকের পরিশ্রমের ছাপটুকু এতে থাকবে।
বইয়ের নাম | বিরহী বাতাস বহে শুধু তোমার জন্যে |
---|---|
লেখক | মোর্শেদা হোসেন রুবি |
প্রকাশনী | বইবাজার প্রকাশনী |
সংস্করণ | প্রথম প্রকাশ, ২০২৩ |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | 320 |
ভাষা | বাংলা |