ষাটের দশকের স্মৃতিকথা বর্তমানের শিকড় সন্ধান
পঞ্চাশ-ষাটের দশকে বড়দিয়ার যে জৌলুস ছিল , তা অনেক আগেই শেষ ! পাটের বাজার আর পাটকল — দুটোই শেষ হয়ে গেল ! পাশের নদীটাও এখন প্রায় শেষ ! বড়দিয়া থেকে লোহাগড়া হয়ে মাগুরা-ঝিনাইদহের দিকে উজানে প্রবহমান নবগঙ্গা নদী মরে গেছে অনেক আগে । বড়দিয়ার উজানে মধুমতির যে অংশ – এখন সেটুকু কেবল সচল আছে । এখান থেকে বাঁক নিয়ে গোপালগঞ্জের মানিকদাহ হয়ে বরিশালমুখী মধুমতি নদীটার বিস্তীর্ণ এলাকা এখন একটা খালের মত হয়ে গেছে , বড়সড় নৌকাই চলতে পারে না সেখানে । মধুমতি নদীকে এখন দেখলে বড় রিক্ত-নিঃস্ব মনে হয়। মনে হয় বড় হাসপাতালের ভেতরে বেড না পেয়ে কোরিডোরে বিছানা পেতে অসুখের চিকিৎসা করাচ্ছে সে ; যেদিন শয্যা পাবে, সেদিন ডাক্তার তাকে একটা মৃত্যু-সনদ ধরিয়ে দেবে, যেমনভাবে মৃত্যু-সনদ পেয়েছে ঝিনাইদাহ-মাগুরা থেকে আসা নবগঙ্গা নদী। এখন মানুষ নদীর নামে ব্রিজের নাম বলে , যেমন –গড়াই ব্রিজ, আড়িয়ালখাঁ ব্রিজ। হয়তো এমন সময় আসবে , যখন ব্রিজের নামে নদীকে চিনতে হবে ; মানুষ বলবে, গড়াই ব্রিজের তলায় একটা নদী ছিল। আমরা হয়তো সেদিকেই চলেছি। অথচ ৭২-৭৩ সাল অবধি মধুমতি-নবগঙ্গা নদীর এই যৌথ স্রোত বেয়ে বৃটিশ কোম্পানীর নামানো স্টিমার চলেছে । স্টিমারে খুলনা গিয়ে চালনা-ঘাট থেকে অন্য স্টিমারে চড়ে রায়মঙ্গল নদীপথে কোলকাতায় যাওয়া যেত । ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এই ট্রানজিট চালু ছিল। শেষরাতে নদ-নদীর এই মহারাজা আমাদের গ্রামের সোজা দক্ষিণে নদীর বাঁকে এসে হুইসেল দিত । বড়দিয়া ঘাটের অপেক্ষমান যাত্রীদের বলতো– আমি আসছি , মালপত্তর গোছাও ! শুনশান রাতের নীরবতা ভেঙ্গে সে-ডাক বহুদূর অবধি পৌছে যেত। এই সাইরেন শুনে বাড়ির বউ, যারা শোবার সময় ভাতের হাড়িতে পানি দিতে ভুলে যেত , তারা উঠে তাদের ভাতে পানি ঢালতো। সকালে এই পান্তা খেয়ে বাড়ির কৃষকেরা চাষবাস করতে মাঠের উদ্দেশে রওয়ানা দিতো ।
বইয়ের নাম | ষাটের দশকের স্মৃতিকথা বর্তমানের শিকড় সন্ধান |
---|---|
লেখক | গাজী মিজানুর রহমান |
প্রকাশনী | মাওলা ব্রাদার্স |
সংস্করণ | |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | |
ভাষা |