সালাফদের দৃষ্টিতে আহলে হাদীস
লেখকের জবানবন্দি থেকে কিছু অংশ:
ক. আমি নিজের কাছে নিরপেক্ষ থেকে বইটি লিখেছি। বিস্তৃত অধ্যয়নের পর আমার কাছে যে সত্য উদ্ভাসীত হয়েছে তা তুলে ধরেছি। নিরপেক্ষ থাকা বলতে আমি বুঝাচ্ছি, কোথাও এমন হয় নি যে, আমি জেনেবুঝে কোন গোঁজামিল দিতে চেষ্টা করেছি বা একটা বুঝে অপরটা লেখেছি।অথবা কোথাও কোন কিছু লুকোছাপা করেছি। তারপরও মানুষ হিসেবে আমার অজান্তেও এমন কিছু হয়ে যেতে পারে বিধায় কয়েকজনকে দিয়ে পান্ডুলিপিটি আগাগোড়া পড়িয়েছি। তাদেরকে বারবার করে বলে দিয়েছিলাম বইটিকে কেবল একজন সাধারণ পাঠকের চোখে নয়, বরং একজন কঠিন সমালোচকের দৃষ্টিতে যেন পড়ে। যাতে আমার চোখ এড়িয়ে কোথাও যদি কোন ভুলব্যাখ্যা, গোঁজামিল বা অন্য কোন আপত্তিকর বিষয় থেকে যায় তবে সেটা শুধরে নিতে পারি। যাদেরকে দিয়ে পাণ্ডুলিপিটি পড়িয়েছি তারা প্রত্যেকেই মাশাআল্লাহ সমালোচনার দৃষ্টিতে পড়ার মতো যোগ্য মানুষ এবং ক্ষেত্রবিশেষ প্রচলিত আহলে হাদীস চিন্তাধারার ভাইদের প্রতি সহানুভূতিশীলও। সুতরাং আমার অন্যায্য কথা আমার চোখে ধরা না পড়লেও তাদের চোখে ঠিকই ধরা পড়বে- এমনটাই ছিলো আমার প্রত্যাশা। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দুনিয়া আখেরাতে উত্তম জাযা দান করুন।
খ. বইটি রচনাতে আমি যে ধারা অবলম্বন করেছি তা হলো, শুরুতেই আহলে হাদীস শব্দের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ তুলে ধরেছি। সামান্য বিশ্লেষণ সহকারে। তারপর প্রতি শতাব্দীর বিখ্যাত সালাফদের বক্তব্যে আহলে হাদীসের অবস্থা, অবস্থান ও তাদের দৃষ্টিতে পরিভাষাটির ব্যবহার তুলে ধরেছি। এইক্ষত্রে উলামায়ে কেরামের মধ্যহতে হাদীসচর্চাকারী ও হাদীসবিশারদ মুহাদ্দিসদের জামাতের বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়েছি। যেহেতু এই প্রসঙ্গে তাদের বক্তব্যের গুরুত্বই হলো সবচে বেশি।
গ. প্রতি শতাব্দীর সালাফে সালেহীন মুহাদ্দিসদের বক্তব্য উপস্থাপনের শুরুতে সেই শতাব্দীতে হাদীসের খেদমতের সামান্য চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।
ঘ. প্রত্যেক মনীষীর বক্তব্য উপস্থাপনের আগে সংক্ষেপে তাঁর পরিচয় প্রদান করেছি। এর মাধ্যমে পাঠক সংক্ষেপে হলেও বহু মনীষীর জীবন ও কর্মের সামান্য ঝলকের সাথে পরিচিত হতে পারবেন। এভাবে উপস্থাপনার ফলে হাজার বছরের বিখ্যাত মুহাদ্দিসদের ছোটখাট একটা তালিকা ও তাদের মৃত্যুসনও পাঠকের জানা হয়ে যাবে।
ঙ. মনীষীদের বক্তব্য উপস্থাপনে বইয়ের কলেবর বৃদ্ধিরোধে সংক্ষিপ্ততার প্রতি বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। তাই প্রত্যেকের অসংখ্য বক্তব্য থেকে উদাহরণ স্বরূপ একটি বা দুই তিনটির বেশি বক্তব্য আমরা উপস্থাপন করা থেকে বিরত থেকেছি। এর ফলে কেউ যেন এমন মনে না করেন যে, তাদের থেকে বইয়ে উপস্থাপিত সামান্য কয়েকটি বক্তব্যের বাইরে আর কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না।
চ. মনীষীদের প্রতিটি বক্তব্য উপস্থাপনের সময় আরবীপাঠটাও আমরা জুড়ে দিয়েছি। যাতে করে বিজ্ঞ পাঠক চাইলে আমাদের করা সেই বক্তব্যের বঙ্গানুবাদটিকে আরবীপাঠের সাথে মিলিয়ে দেখে নিশ্চিত হতে পারেন। আমরা চাই না পাঠকের ভেতর কোনরূপ ধোঁয়াশা থেকে যাক। তাছাড়া মূল আরবীপাঠ থাকলে উপস্থাপিত বক্তব্যটি মূলসূত্র থেকে খুঁজে পেতে সহজ হয়। যদি কেউ চান উল্লেখিত বক্তব্য মূলসূত্র থেকে যাচাই করে নিবেন বা আগপিছ মিলিয়ে দেখবেন তিনিও যাতে সহজে তা করতে পারেন সেজন্যই আমাদের এই ব্যবস্থা। মোটকথা, আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হবে সত্যের ও প্রকৃত বাস্তবতার সীমানায় প্রবেশ করা। কোন ভুল তথ্য বা বিকৃত বক্তব্য কিংবা অর্ধসত্য দিয়ে আমরা প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার সম্পূর্ণ বিরোধী। সব কিছুকে তাই উন্মুক্ত রেখেছি পাঠকদের সামনে। যাতে তারা নিজেদের মতো সত্যকে খুঁজে নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন।
ছ. বইটি কোন খণ্ডনমূলক বই নয়। এটি একজন লেখকের দীর্ঘদিনের অধ্যয়নের ফলাফল। কাউকে আঘাত করতে নয়, বরং পাঠক হিসেবে আমার সামনে যে বাস্তবতা উদ্ভাসিত হয়েছে তা তুলে ধরতেই এই বইয়ের জন্ম। তারপরও আমার উপস্থাপিত কথামালার উপর কিছু আপত্তি থেকে যায়। যেগুলো মূলত কিছু লেখকদের উপস্থাপিত বক্তব্যের সূত্র থেকে সৃষ্ট। তাই নিজেদের বক্তব্যের সঠিকতা প্রমাণে এবং বইটির বিষয়বস্তুর পূর্ণাঙ্গতা সাধনে আমাকে পরিশিষ্টে সেসব বিষয়ে কথা বলতে হয়েছে। প্রমাণভিত্তিক আলোচনার স্বার্থে কিছু কিছু বইয়ের নামও উল্লেখ করতে হয়েছে। তবে এর পুরোটাই আমি টীকাতে এনেছি। মূল বইয়ের পরিশিষ্টে সুনির্দিষ্টভাবে কোন বইয়ের নাম উল্লেখ না করে সাধারণভাবে আলোচনা করার এবং কোন বইয়ের নাম উল্লেখের প্রয়োজন পড়লে তা টীকাতে নিয়ে আসার পেছনে এটাই ছিলো মূল কারণ।
আল্লাহ তাআলা এই মেহনতকে কবুল করে নিন। কোন ধরনের দলীয় চশমা না পরে বিশুদ্ধচিত্তে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বইটি অধ্যয়ন করার তাওফীক দান করুন। পাঠকের কাছে আমার বিনীত নিবেদন থাকবে, বইয়ে উপস্থাপিত আমার কোন বক্তব্য নিয়ে বলার কিছু থাকলে অবশ্যই তিনি যেন আমাকে তা জানাতে কৃপণতা না করেন। তার কথা বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক হলে অবশ্যই আমি মেনে নিতে দ্বিধাবোধ করবো না। কারণ আবারও বলছি, আমরা সবাই চাই প্রকৃত বাস্তবতার সঙ্গী হতে। অবাস্তব আর জোড়াতালিযুক্ত দাবী থেকে মুক্ত হতে।”
বইয়ের নাম | সালাফদের দৃষ্টিতে আহলে হাদীস |
---|---|
লেখক | আবদুল্লাহ আল মাসউদ |
প্রকাশনী | মাকতাবাতুল আসলাফ |
সংস্করণ | প্রথম প্রকাশ, ২০১৮ |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | 120 |
ভাষা | বাংলা |