সিয়াম ও রমাজান
সিয়াম:
‘সিয়াম’ ও ‘সাওম’ আরবি শব্দ। শাব্দিক অর্থ বিরত থাকা। এটি আল্লাহ রাববুল আলামিনের পক্ষ থেকে অবশ্য পালনীয় একটি দৈহিক ইবাদত। এটি ইসলামের মৌলিক পাঁচ স্তম্ভের মাঝে চতুর্থ।
শরিয়তের পরিভাষায়- জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন মুসলিমের ওপর সুবহে সাদিক (আলো পূর্ব দিগন্তে ক্রমাগত বিস্তৃত হওয়ার সময়) থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও পাপাচার এবং কামাচার ও শরিয়তের বারণকৃত ভোগ- বিলাস থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা রোজা বলে।
রমাজান
রমাজান বা রামাদান আরবি শব্দ। যার মূলধাতু হলো- ‘রামযা’ বা “আররাময’। যার অর্থ গরমের তীব্রতা। বছরের অন্যান্য মাসের মধ্যে মাহে রমাজানের অবস্থান আলাদা। এ মাসের আছে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য, যা অন্যান্য মাসের নেই। ওইসব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যতই চিন্তা করা যায় এ নাসের নহিনা, গুরুত্ব ও তাৎপর্য ততই প্রকাশিত হয়।
প্রথম বিশিষ্টতা এই যে, স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে এই মাসকে ‘সম্মানিত মাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
দ্বিতীয় বিশিষ্টতা এই যে, এই মাসেই সর্বশেষ আসমানি কিতাব কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। মাহে রমাজানের নাম উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা এর ফজিলত ঘোষণা করেছেন-
اشهر رمضانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى
والفرقان)
‘রমাজান মাস- যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য (আদ্যোপান্ত) হেদায়াত এবং এমন সুষ্পষ্ট নির্দেশনাবলী সংবলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং (সত্য-মিথ্যার মধ্যে) চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়’।’
১ সুরা বাকারা, আয়াত, ১৮৫হিলাল
চাঁদের বিশেষ একটি অবস্থাকে ‘হিলাল’ বলে। গবেষণা বিভাগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রকাশিত আরবি-বাংলা অভিধান-এ আছে, নতুন চাঁদ, মাসের প্রথম দুইরাত কিংবা প্রথম থেকে তৃতীয় বা সপ্তম রাত বা মাসের শেষের দুইরাত অর্থাৎ ছাবিবশ-সাতাশের তারিখের চাঁদকে হিলাল বলা হয়। অবশিষ্টাংশ রাতের চাঁদকে কমার বলা হয়।
সাহরি
‘সাহরি’ আরবি শব্দ। সুবহে সাদিকের পূর্বের খাবার, যা রমাজান মাসে বা যেকোনো মাসে সাওম পালনের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিকের পূর্বে গ্রহণ করা হয়।
ইফতার
‘ইফতার’ আরবি শব্দ। রমাজান মাসে বা বছরের নিষিদ্ধ পাঁচদিন ব্যতীত যেকোনোদিন মুসলিমগণ সারাদিন রোজা রাখার পর সুর্যাস্তের সময় খাবার গ্রহণ করাকে ইফতার বলে। আর ওই খাবারকে বলা হয় ‘ইফতারি’। ইফতার করা একটি ইবাদত। খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে ইফতার করা সুন্নত।
তারাবিহ
তারাবিহ আরবি ‘তারবিহাতুন’ শব্দের বহুবচন। এর আভিধানিক অর্থ হলো- আবান করা, বিশ্রাম করা। এটি ইসলামের একটি শরয়ি পরিভাষা। এটাকে কিয়ামে রমাজানও বলা হয়। পবিত্র রমাজান মাসব্যাপি মুমিন বান্দাগণ প্রতিদিন ইশার সালাতের পর বিতিরের আগে এই সালাত আদায় করেন। চার ইমানের মাজহাব অনুসারে তারাবিহর সালাত ২০ রাকাত।
তারাবিহর সালাত রমাজানুল মুবারকের অন্যতম শিআর বা প্রতীক। মুসলিমদের হৃদয়ে রয়েছে তারাবিহর অনেক মর্যাদা ও মহত্ত্ব। এবং আল্লাহ রাববুল আলামিনের নিকটও আছে এর বিশেষ সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব। হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
من قام رمضان إيمانًا واحتسابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমাজানের রাতে ইবাদত করবে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”
বইয়ের নাম | সিয়াম ও রমাজান |
---|---|
লেখক | আহমাদ রিফআত |
প্রকাশনী | মাকতাবাতুল খিদমাহ |
সংস্করণ | |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | |
ভাষা |