সিন্ধু থেকে বঙ্গ (দুই খণ্ড একত্রে)
সিন্ধু থেকে বঙ্গ : কেন পড়া দরকার!
অত্যন্ত বিস্ময়কর একটি জিজ্ঞাসার সূত্রধরে ‘সিন্ধু থেকে বঙ্গ’ গ্রন্থটির জন্ম। জিজ্ঞাসাটিকে শুধু ‘বিস্ময়’ শব্দে ব্যক্ত করলে, কিঞ্চিত অন্যায় হবে। বলতে হবে মহাবিস্ময়! কারণ, এর উত্তরে পাওয়া যাবে, জীবনঘনিষ্ট ও জীবনের সকল দিক পরিব্যাপ্ত, মানব প্রকৃতি ও স্বভাবানুকূল ধর্ম, ইসলামের ব্যাপকতা ও মহানুভবতা, ন্যায়পরায়ণতা ও গ্রহণযোগ্যতার ইতিবৃত্ত।
লেখকের ভাষায়,
‘বহুদিন থেকে একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম, ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট এই দেশটিতে, এত মুসলিমের অধিবাস ঘটেছে কীভাবে! কীভাবে এখানে এত মুসলিমের সমাগম ঘটল। এরা কি সবাই ধর্মান্তরিত, নাকি বহিরাগত?’
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন! আসলেই মহাবিস্ময়! যদি বলা হয়, ‘এরা ধর্মান্তরিত।’ তাহলে জবাব দিতে হবে, ‘কেন একটি অপরিচিত ধর্মকে এত বিপুল জনগোষ্ঠীর হৃদয় আত্মবরণ করে নিল? এমন কী রহস্য এতে আছে, যা এই বৃহৎ জনসমাজকে নিমিষেই আত্মার আত্মীয় বানিয়ে ফেলল?!’ তাহলে তো নিমিষেই বলা যায়, ‘জনম জনম ধরে এখনকার গণমানুষের আত্মার আকুতি শোনা হয় নি? তাদের হৃদয়ে প্রশান্তির সমীরণ বইতে দেওয়া হয় নি? অতএব ইসলামের আগমনে সাগর তৃষিত হৃদয় শুধু পরিতৃপ্তই হয় নি, বরং পেয়েছে, জরাগ্রস্থ পঙ্কিল অধর্মের অত্যাচার থেকে মহামুক্তি। মৃত্তিকালগ্ন মৃতসম প্রাণে নবতর জীবনের ফুর্তি।’ আর যদি চায়ের কাপে ঝড় তুলে ‘বহিরাগত’ বলে খোটা মারা হয়, তাহলে পূর্ণিমার সুকুমার্র্য নেড়ি কুকুরের সহ্যের বাইরে হলে, কী-ই বা করার আছে!!
লেখক প্রশ্নটির যৌক্তিকতা তুলে বলেন,
‘ভারতবর্ষে মুসলিমদের দাপট ও শাসনকেন্দ্র ছিল দিল্লি ও তার আশপাশ; বড় বড় আলেম-ওলামা, পির-মাশায়েখের খানকাও ছিল ওখানে। সেখানেও মুসলিমদের সংখ্যা কোনো কালেই পঁচিশ শতাংশের ওপরে ছিল না। কিন্তু এইখানে। এত নদী ও সোঁদা মাটির এই দেশে, শাসনের কেন্দ্র থেকে বহু বহু দূরে, যেখানে কোনো কালে কোনো নবি এসেছেন বলে শোনা যায় না, যেখানে লোকেরা নবিদের আনীত কোনো একটি পরিচিত ধর্মবিশ্বাসের সাথে আদৌ পরিচিত ছিল না। ভারতবর্ষে আগত আর্যরা তাদের নবিকে হারিয়েছিল এখানে আসারও হাজার বছর আগে। নবি ও রাসুলদের আনীত ধর্ম একত্ববাদ সম্পর্কে এখানে লোকেরা দূরতম কোনো ধারণা রাখত না। সেই ভারতের একটি প্রান্ত, একটি অঙ্গ, বঙ্গ। বিশেষত এই পূর্ববঙ্গের লোকেরা কীভাবে আধুনিক ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্টতায় পরিণত হলো তা আমার মনে এক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল। এই সূত্র থেকেই এই বই রচনার সূচনা।’
আসলে এখানেই আমরা খুঁজে পাই ইসলামের প্রাণ-প্রাচুর্য ও শেকড়ের সন্ধান। প্রিয়তম পিতাদের সুদীপ্ত নামধাম। বাধার বিন্ধ্যাচল ও হিমালয়সম বৈরিতা ঠেকিয়ে প্রাণে প্রাণে কীভাবে ইসলাম বিজয়ী হয়ে ওঠল, তার নিপুণ ইতিবৃত্ত। দৃষ্টিগ্রাহ্য বাহ্য কোনো উপকরণ ছাড়াই কীভাবে মানুষ পেল মহান রবের সন্ধান। তাঁর সুপবিত্র দীন ইসলাম।
সেই আজন্ম আরাধ্য মহাকাব্যের বিস্ময়তায় লেখক ধীরলয়ে অবমুক্ত করেছেন, হাজার বছরের ধুলোর আস্তরণ। প্রজ্জ্বলন করেছেন শত বছরের নির্বাপিত প্রদীপন। পরিশোধ করেছেন সহস্রাব্দের ঋণ। ধীমান প্রত্যয়ে সগর্বে তুলে ধরেছেন বাবার বাবাদের স্বর্ণলতিকা।
তাই ‘সিন্ধু থেকে বঙ্গ’ নিছক, গতানুগতিক ও খসখসে কোনো ইতিহাস গ্রন্থ নয়। অপ্রয়োজনীয় তথ্য ও তত্ত্বের ভারে নির্জীব কোনো রেজিস্টার বই নয়। বরং নিজেদের অস্তিত্বের মার্জিত দস্তাবেজ। বৈধ জন্মসনদ। শেকড়ে ফেরার মোহন মায়া। হৃদয়গ্রাহী গদ্যে দীপিত অতিতের বর্ণনা। যেন প্রতিটি প্রান্তরে লেখক নিজে ঘুরে এসে জানান দিচ্ছেন তাদের সফলতা-ব্যর্থতা। উত্থান-পতন। অন্তর্বাস্তবতা ও বহির্বাস্তবতা।
সর্বোপরি লেখকের চেষ্টা ছিল, গ্রন্থটি যেন ছাত্রবোধ্য পাঠ্যের স্থান নিতে পারে। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন শাস্ত্রপাঠের মতো ইতিহাস পাঠে যেন সহায়তা দিতে পারে। তাই প্রতিটি অধ্যায় রচিত হয়েছে, পরিমিত উপস্থাপনা এবং সহজে ফলাফল নিরুপণ সূত্রে। যেন প্রথম পাঠেই পাঠক পৌঁছে যেতে পারেন, অভিষ্ট গন্তব্যে।
নিশ্চয় বলতে হবে, আমাদের কালে ‘সিন্ধু থেকে বঙ্গ’ ইতিহাস শাস্ত্রে একটি মহৎ সংযোজন।
বইয়ের নাম | সিন্ধু থেকে বঙ্গ (দুই খণ্ড একত্রে) |
---|---|
লেখক | মনযূর আহমাদ |
প্রকাশনী | চেতনা প্রকাশন |
সংস্করণ | ২য় মুদ্রণ, ২০২৩ |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | 1100 |
ভাষা | বাংলা |