দুআ ও যিকির
বইটি কেন নেবেন?
এক. দুআ ও যিকিরের আদব, দুআ কবুলের শর্ত, কাদের দুআ কবুল হয়-কাদের দুআ কবুল হয় না, কোন কোন সময়ে দুআ কবুল হয়, কোন কোন স্থানে দুআ কবুল হয়, কোন অবস্থায় দুআ কবুল হয় ইত্যাদি অনেক বিষয় আছে যেগুলো আমাদের অনেকেরই জানা নেই। অথচ দুআ ও যিকিরকারী সবার জন্য এগুলো জানা অত্যন্ত জরুরী। তেমনিভাবে দুআ ও যিকির সম্পর্কে আমাদের সমাজে নানান ধরণের ভ্রান্তিও রয়েছে। এজন্য আমরা প্রথম অধ্যায়ে দুআ ও যিকির সম্পর্কে এজাতীয় নানান বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশাকরি এই আলোচনাগুলো পড়লে পাঠক জানতে পারবেন কেন আমাদের দুআ কবুল হয় না? কিভাবে দুআ করলে আমাদের দুআ কবুল হবে? সর্বোপরি আমাদের কিভাবে দুআ করা উচিত ইত্যাদি।
দুই. প্রতিটি দুআ ও যিকির সহিহ কিংবা হাসান তথা নির্ভরযোগ্য হাদিস থেকেই গ্রহণ করা হয়েছে। তেমনিভাসে প্রতিটি দুআর পরে হাদিসের রেফারেন্স উল্লেখ করার পাশাপাশি হাদিসটির মান উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে কোথাও কোথাও সাধারণ কোন দুর্বল হাদিস উল্লেখ করার প্রয়োজন হলে টিকায় তা উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। তবে মুনকার, মাতরুক তথা অতি দুর্বল কোন হাদিস বিলকুল গ্রহণ করা হয় নি।
তিন. দুআর যেসব গ্রন্থে শুধু সহিহ কিংবা হাসান হাদিসে বর্ণিত দুআগুলোই উল্লেখ করার শর্ত করা হয়েছে সেগুলোতে শর্তের কারণে অনেক প্রসিদ্ধ দুআ ও যিকির বাদ পড়েছে। অথচ অনুসন্ধান করলে দেখা যায় বাদ দেওয়া দুআর হাদিসটি ‘মুনকার,’ ‘মাতরুক’ তথা অতি দুর্বল কিংবা ভিত্তিহীন নয়; বরং হাসানের কাছাকাছি কিংবা ফাযায়েলের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য এমন হাদিস। এজাতীয় প্রসিদ্ধ দুআগুলো আমরা কখনো মূল গ্রন্থ কখনো টিকায় উল্লেখ করে হাদিসটি নিয়ে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা পেশ করার চেষ্টা করেছি। যেমন আয়নায় চেহারা দেখার দুআ-اللهم حسنت خلقي فحسن خلقي এই দুআটি অনেকেই উল্লেখ করেন নি। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে হাদিসটি ভিত্তিহীন নয়। বিশেষত বাইহাকির ‘আদ দাআওয়াতুল কাবির’ এর রেওয়ায়েতটি অনেকের সামনে না থাকায় তারা অন্যান্য সনদগুলোর উপর নির্ভর করে এটাকে ভিত্তিহীন বলার চেষ্টা করেছেন। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে এতে দুর্বলতা রয়েছে।
চার. আমাদের দেশে কিছু কিছু দুআর ক্ষেত্রে ভুল শব্দের প্রচলন রয়েছে। যেমন খাবারের শুরুতে প্রসিদ্ধ দুআ হচ্ছে- بسم الله وعلى بركة الله অথচ এটি ভুল। সঠিক হচ্ছে- بسم الله و بركة الله এখানে على যুক্ত হবে না। আবার খাবার শেষের দুআ প্রসিদ্ধ হচ্ছে এভাবে-الحمد لله الذي أطعمنا وسقانا وجعلنا من المسلمين অথচ এটি ভুল। শেষে من যুক্ত করা ঠিক নয়। বরং সঠিক হবে- وجعلنا المسلمين দুআর মধ্যে এজাতীয় ভুল অনেক। তেমনিভাবে মুআনাকার একটি দুআ এভাবে প্রসিদ্ধ- اللهم زد محبتي لله ورسوله অথচ কোন হাদিসেই মুআনাকার এমন কোন দুআ বর্ণিত হয় নি। আমরা বইটিতে সঠিক বিষয় উল্লেখ করার পাশাপাশি কি ভুল হয়েছে? কেন ভুল হয়েছে? এসম্পর্কে টিকায় সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
পাঁচ. দুআর বাংলা গ্রন্থগুলোতে সাধারণত প্রতিটি বিষয়ের একটি শিরোনাম দিয়ে দুআ উল্লেখ করা হয়। দুআটি কোন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, কোন প্রেক্ষাপটে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুআটি বলেছেন তা উল্লেখ করা হয় না। এতে বেশ সমস্যা তৈরী হয়। যেমন: দাওয়াত খাওয়ার শেষে أللهم أطعم من أطعمني واسق من سقاني দুআটি বেশ প্রসিদ্ধ। অথচ এটি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত খাওয়ার পর বলেন নি; বরং খাবার চাওয়ার সময় এই দুআটি বলেছিলেন। তাঁর দুআ শুনেই হযরত মিকদাদ রা. দুধের ব্যবস্থা করেছিলেন। সাধারণত দুআর বইসমূহে বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করা হয় না। যদি দুআ ও যিকির উল্লেখ করার পাশাপাশি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মূল বক্তব্যটি উল্লেখ থাকতো তাহলে বিষয়টি সবার কাছে সুস্পষ্ট থাকতো। আরেকটি উদাহরণ দেখুন, আমরা মুসাফাহার সময় বলি- يغفر الله لنا ولكم অথচ কোন হাদিসেই এভাবে পড়তে বলা হয় নি বরং হাদিসে শুধু পরস্পর ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা বলা হয়েছে। আর ক্ষমা প্রার্থনার এই বাক্য আমাদের নিজেদের তৈরী। এখানে কেউ যদি অন্য শব্দে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে এর সুযোগ রয়েছে।
কখনো এমন হয় যে, দুআটি মূলত নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন নি; বরং কোন সাহাবি কিংবা তাবিয়ি এটি পড়তেন। কিন্তু শুধু শিরোনাম দিয়েই দুআ উল্লেখ করার কারণে সবাই ধারণা করে নেন যে, এটিও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শব্দ; অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। দুআ উল্লেখ করার পাশাপাশি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মূল বক্তব্যটি উল্লেখ না করার কারণে এজাতীয় নানান অস্পষ্টতা ও সমস্যা তৈরী হয়ে থাকে। তাই প্রতিটি দুআ ও যিকির উল্লেখ করার পর আমরা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মূল বক্তব্যটি উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি।
ছয়. দুআ ও যিকিরের উৎসগ্রন্থ যেমন: আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাহ, নাসায়ি; আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাহ, ইবনুস সুন্নি; আদ দুআ, তাবারানি; আদ দাআওয়াতুল কাবির, বাইহাকি; আল আযকার, নববী; সিলাহুল মুমিন, ইবনুল হুমাম; আল হিসনুল হাসিন, জাযারি এগুলোসহ দুআ ও যিকিরের অসংখ্য গ্রন্থ সামনে রেখে বইটি প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি হাদিসের কিতাবসমূহ বিশেষত কুতুবে সিত্তা, সহিহ ইবনে হিব্বান, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, মিশকাতুল মাসাবিহ ও মাজমাউয যাওয়াইদ এর কিতাবুদ দুআ ও কিতাবুল আযকারের হাদিসগুলোকে সামনে রেখে বইটি প্রস্তুত করা হয়েছে। তাই এটি আলোচিত বিষয়ের জামে ও বিশদ একটি গ্রন্থ হয়েছে।
সাত. সাধারণত দুআ ও যিকিরের যেসব গ্রন্থে আল আসমাউল হুসনার আলোচনা থাকে না। আর থাকলেও সেগুলোর শুধু শাব্দিক অর্থই উল্লেখ করা হয়। এগুলোর মর্ম ও উদ্দেশ্য আলোচিত হয় না। অথচ এগুলো জানা অত্যন্ত জরুরী। কারণ হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এই ইসমগুলো এহসা তথা আয়ত্ত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর এই এহসার এক ব্যাখ্যা হচ্ছে এগুলোর মর্ম ও উদ্দেশ্য বুঝে এই গুণগুলো ধারণ করা। এজন্য আমরা এই ইসমগুলোর মর্ম ও উদ্দেশ্য উল্লেখের পাশাপাশি বান্দা এই ইসমগুলো থেকে কী শিক্ষা নিবে, কিভাবে এসব গুণে গুণান্বিত হবে এটিও আলোচনা করেছি।
এছাড়াও আরো অসংখ্য বিষয় রয়েছে যা সাধারণত দুআ ও যিকিরের বাংলা বইগুলোতে থাকে না।
বইয়ের নাম | দুআ ও যিকির |
---|---|
লেখক | মাহবুব হাসান আরিফি |
প্রকাশনী | রাহনুমা পরিবেশিত |
সংস্করণ | |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | |
ভাষা |