হ্যাপি স্টুডেন্ট লাইফ
“হ্যাপি স্টুডেন্ট লাইফ” শুনলেই মনটা ফিরে যায় সেই চিরচেনা শৈশবে। একটু বৃষ্টি হলেই ছুটি কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাড়ি ফেরা। টিফিন ভাগ করে খাওয়া। ক্লাসের ফাঁকে আঁকিবুঁকি। সন্ধ্যা হলেই পড়তে বসা৷ কারেন্টটা চলে যাওয়ার অপেক্ষা। আরও কত কী। শিক্ষাজীবনের এই মোক্ষম সময়ে শিক্ষাগ্রহণের চেয়ে আনন্দটাই ছিল বেশি৷ অথচ শিক্ষা বলতে বইয়ের পাতার অক্ষর আয়ত্ত করা নয়, আদব ও আখলাক গঠনের এই সময়টাতে এটাই প্রেষণা ও অনুপ্রেরণাদায়ক যে, গুরুজনের কাছ থেকে আদব, আমল ও আখলাকের সর্বোত্তম পাঠ নেওয়া।
আর এটাই জীবনের সর্বোত্তম সময় বলেই হয়তো বলা হয়- হ্যাপি স্টুডেন্ট লাইফ।
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে মেধা ও মনন দিয়েছেন, ভালো-মন্দ বাছাই করার৷ চিন্তাভাবনা করে ইতিবাচক এবং গুরুত্বপূর্ণ দিক সনাক্ত করার। সতর্কতা ও সচেতনতার সাথে কাজ করার। কিন্তু শৈশবে এগুলো বিবেচনাবোধ জাগ্রত হয় না। আমাদের পারিপার্শ্বিক বাস্তুতন্ত্র ও গুরুজনের শাসন-বারণের ছায়াতলেই বাস্তব জ্ঞানের বিকাশ ও পরিপক্কতা আসে।
দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইসলামের স্বার্থরক্ষায় সুরক্ষিত দূর্গের ন্যায়। আর ইসলাম প্রচারে প্রভাব সৃষ্টিকারী মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। আসন্ন সমস্যা সমাধানে আত্মিক, মানসিক ও বাস্তবিক সহায়তায় অগ্রগামী।
দীনি প্রতিষ্ঠান এমন এক মাধ্যম যেখান থেকে দীন ও জাতি দুয়ের কল্যাণে ও তত্ত্বাবধানে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সংস্কৃতি, সভ্যতা, ঐতিহ্য সম্পর্কিত জ্ঞান থেকে দূরে থাকার ফলে দীনদারদের সম্মান কমে গিয়েছে। পাশাপাশি আদব ও আখলাকের উচু মর্যাদার প্রতি উদাসীন। এ গ্রন্থ আমাদেরকে আমাদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও সক্ষমতা অনুসারে নিজেকে গড়ার কথা বলে। আমাদের আত্মিক ও মানসিক দৃঢ়তা তৈরি করে। নিত্যনতুন চাহিদা ও আসন্ন বিপদ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে বলে।
“রাজপ্রাসাদের গম্বুজ তোমার নয়তো আবাস,
অফম্য বাজপাখি তুমি,পাহাড়ের চূড়ায় বুনো নিবাস। ”
– জনৈক কবি
জ্ঞানার্জন কোনো মামুলি বিষয় নয়। অনেক সাধনা, ত্যাগ, অপেক্ষা ও পরিশ্রমলব্ধ অর্জন। বইটিতে রয়েছে জ্ঞানার্জনে শিক্ষার্থীর করণীয় ও বর্জনীয় দিক। যেখানে মৌলিক চাহিদা, শরয়ী জ্ঞান লাভ, জ্ঞান হলো নবিদের মিরাস, ইলম অর্জন ও ক্ষমা, আকাবির-আসলাফদের যোগ্যতা অর্জনের পাথেয়, জ্ঞানসাধনায় একাগ্রতা, আন্তঃসম্পর্কের আধিক্যতার পরিণাম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। শিক্ষাজীবনে চিঠিপত্র পড়া থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তারপর ধাপে ধাপে বিস্তারিত বর্ণনার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সময়ের গুরুত্ব, সাবধানতা, বিনয়-নম্রতা, আত্মসমালোচনা হেতু ছয়টি অধ্যায় রেখাপাত করা হয়েছে। তবে পঞ্চম অধ্যায়ে নিজেকে তৈরির গুরুত্ব প্রাধান্য পেয়েছে। এত দরকারি আলোচনায় ঠাসা গ্রন্থটির কিছুই যেন ফেলনা নয়। শিক্ষক- ছাত্রের সম্পর্ক আলাদাভাবে প্রাধান্য পেয়েছে। অষ্টম ও শেষ অধ্যায়ে ইলমের দাবি ও প্রয়োজন নিয়ে লেখক বেশ লম্বা পরিসরে লিখেছেন।
বইটিকে আদতে ছোট মনে হলেও ছোট নয়। বরং এর ওজনদার আলোচনা অনেক ভারী ও গুরুগম্ভীর। জীবনে কাজে লাগানোর পরিপূর্ণ গাইডলাইন। যদিও লেখক এখানে শিক্ষাজীবন তথা শৈশবের হাতেখড়ির সময়কে প্রাধান্য দিয়েছেন, তবুও জীবনের কোনো সময় ফেলনা ও অকার্যকরী নয়। তাই অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের তাগিদে পুরো জীবনটাই হ্যাপি স্টুডেন্ট লাইফ বানিয়ে নেওয়া উত্তম।
এই গ্রন্থ অনুপ্রেরণা জাগায় জ্ঞান- প্রজ্ঞা, অন্তর্দৃষ্টি, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা, ফলপ্রসূ আবেগ, দৃঢ়প্রত্যয়, নির্ভীকতা, ধৈর্য ও সুদৃঢ় মনোবল, বিশুদ্ধ কর্মপন্থা, স্বচ্ছ ইখলাস, উন্নত চরিত্র, দায়িত্বজ্ঞান ও আত্মবিশ্বাসের সাথে পূর্ণ উদ্যোমে কাজ করার।
তাই বাছাইকৃত উত্তম মোটিভেশনাল বইগুলোর মধ্যে এই বইটিকে আপনি রাখতেই পারেন।
“সততা, ন্যায়পরায়ণতা আর সাহসীকতার পাঠ পড়ো পূনর্বার
তোমার থেকে নেওয়া হবে এ ধরণীর নেতৃত্ব আবার।”
বইয়ের নাম | হ্যাপি স্টুডেন্ট লাইফ |
---|---|
লেখক | সাইয়েদ মুহাম্মাদ রিয়াজ নদভী |
প্রকাশনী | রিশাহ্ পাবলিকেশন্স |
সংস্করণ | |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | |
ভাষা |