একাত্তরের বিষাদ সিন্ধু
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ও আবহে বেড়ে উঠা মানুষ প্রফেসর অমর আলী। কৈশোরে ভাষা আন্দোলনের সাফল্যে এবং চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের মহাবিজয়ে- বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষে ভীষণ আন্দোলিত ও পুলকিত হন তিনি। তারুণ্যে শিক্ষার অধিকার সুরক্ষায় ১৯৬২ সনে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষা আন্দোলনে। ১৯৬৪ সনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে গড়ে তুলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং দাঙ্গা প্রতিরোধে কমিটি। ১৯৬৬ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে জড়িয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলনে। প্রথম দিকে ছাত্রনেতা হিসেবে এবং পরবর্তীতে কলেজ শিক্ষক হিসেবে ছয় দফা আন্দোলনের সাফল্যের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান নিজ এলাকায় ও শিক্ষাঙ্গনে। ছাত্র-জনতার নিবিড় ভালোবাসায় ১৯৬৯র গন অভ্যুত্থানের সফল নেতৃত্ব দেন নিজ এলাকায়। ভুমিকা রাখতে শুরু করেন গণমানুষের অধিকার আদায়ে ও শিক্ষা উন্নয়নে। বাঙালির অধিকার আদায়ে ১৯৭০ এর ঐতিহাসিক নির্বাচনের নির্বাচনী প্রচারণায়ও ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। জনপ্রিয়তায় তখন তিনি আঞ্চলিক মহানায়ক। মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মনিয়োগ করেন বিবিধ পন্থায় ও কৌশলে। তিনি হয়ে পড়েন স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের এক মূর্ত প্রতীক। তাঁকে আটকানোর জন্য ওৎ পেতে থাকে চিরশত্রæ পাকি হায়েনা এবং তাদের এদেশীয় দোসরেরা। একসময় পাতা জালে বন্দী হয়ে পড়েন তিনি। এ বীরপুরুষ নিজের স্বজনদের জীবন রক্ষার্থে- পালিয়ে বাঁচার সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগান নি। নিজেদের সুবিধার্থে ব্যাপক জনপ্রিয় এ শিক্ষককে সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতা প্রদান করে পাকি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরেরা চেয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষে নিতে । কিন্তু তিনি তীব্র ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেন। নৃশংসতম অত্যাচারেও তিনি জাতির শত্রুদের কাছে পরাস্ত হননি। বেছে নিয়েছিলেন শহীদী মৃত্যু । অধ্যাপক অমর আলী সত্যিই মরেণ না! বাউলের গানে গানে ও গীতি কবিতায়, আর লেখকের কলমে কলমে আরো বেশি জীবন্ত হয়ে ওঠেন মানুষের অন্তরে অন্তরে নিরন্তর। এমনই মহৎ এক শহীদ বুদ্ধিজীবীর বীরোচিত আত্মত্যাগের কাহিনী নিয়ে রচিত উপন্যাস ‘একাত্তরের বিষাদ সিন্ধু’। বাস্তবভিত্তিক এ কাহিনীতে ফুটে উঠেছে আবহমান কালের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, স্বাধিকার আন্দোলন থেকে থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা, ছয় দফার বিষয়গুলো, ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ৭০ এর ঐতিহাসিক নির্বাচন, স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অবদান, জনযুদ্ধের স্বরূপ ও প্রকৃতি, মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া, মদিনা সনদ, প্রেম, দ্রোহ, স্বাধীনতা বিরোধীদের বহুমাত্রিক নির্যাতন, বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা, স্বজনহারাদের বিষাদ-বেদনা-কান্না, বিজয়ের লক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দৃপ্ত শপথ- এক কথায় মুক্তিযুদ্ধের সম্পূর্ণ অনুভব এবং বহুমাত্রিক চিত্র। ইতিহাস, আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের শোকগাথা-বিজয়গাথার এক অনবদ্য সংমিশ্রণ। শহীদ বুদ্ধিজীবীর জীবনীভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসের জগতে ‘একাত্তরের বিষাদ সিন্ধু’ অভিনব ও অনন্য এক সাহিত্য প্রয়াস- যা মহান মুক্তিযুদ্ধের বহুমাত্রিকতাকে একই মলাটে সুচারুভাবে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে । আমি পাঠকদের সুচিন্তিত মতামত ও মূল্যায়নের অপেক্ষায় থাকলাম।
বইয়ের নাম | একাত্তরের বিষাদ সিন্ধু |
---|---|
লেখক | রফিকুল ইসলাম |
প্রকাশনী | এশিয়া পাবলিকেশন্স |
সংস্করণ | |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | |
ভাষা |