প্লেটো : তাইমিয়াস ও ক্রিতিয়াস
প্লেটোর তাইমিয়াস পুস্তকটিতে যে দার্শনিক প্রত্যয় তুলে ধরা হয়েছে তা হলাে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির পেছনকার ‘যুক্তি ও প্রয়ােজনীয়তা’; প্রথমত ব্রহ্মাণ্ডে বিদ্যমান বিশৃঙ্খলার মধ্যে শৃঙ্খলা আনয়নের যুক্তি এবং ব্রহ্মাণ্ড ও তার মধ্যে মানুষসহ। সকল প্রাণীর প্রয়ােজনে তাতে বিভিন্ন জিনিসের সৃষ্টি। “তিনি (দেবতা/Demiurge) দেখতে পেলেন যে,দৃশ্যমান ব্রহ্মাণ্ড স্থির অবস্থায় নেই বরং বিসংগত এবং বিশস্থল অবস্থায় বিরাজমান; তখন তিনি বিবেচনা করলেন যে,শৃঙ্খলা সকল দিক থেকে উত্তম এবং তাই বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলা দিলেন।…সমগ্র হিসেবে কোনাে বুদ্ধিহীন প্রাণী সমগ্র হিসেবে কোনাে বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণীর তুলনায় কখনাে। অধিকতর সুন্দর হবে না,আর আত্মা ছাড়া কোনাে কিছুর। পক্ষেই বুদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। এই যুক্তিবােধ থেকেই তিনি আত্মায় বুদ্ধি রােপণ করেন এবং আত্মাকে দেহের ভেতর স্থাপন করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড গড়ে তুললেন এবং নিশ্চিত করলেন যেন তার সৃষ্টি প্রকৃতিগতভাবে সবচেয়ে সুন্দর হয়,সম্ভবপর সবচেয়ে উত্তম হয়।… সত্যিকার অর্থে দেবতার। দূরদর্শিতার মাধ্যমেই আত্মা ও বুদ্ধিমত্তায় বলীয়ান হয়ে জীবন্ত সত্তা হিসেবে পৃথিবী আবির্ভূত হয়েছে। কিন্ত পৃথিবী সৃষ্টির পেছনে এই কারণই যথেষ্ট ছিল না। এই পৃথিবী অস্তিমান হয়েছে প্রয়ােজনীয়তা ও বুদ্ধিমত্তার সংমিশ্রণে। সুষ্ট জিনিসপত্রকে প্রবুদ্ধ করে বুদ্ধিমত্তা তার ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে এবং যৌক্তিক প্রবুদ্ধকরণের হাতে প্রয়ােজনীয়তার এই নতিস্বীকৃতি দিয়েই যে ব্রহ্মাণ্ড এখন। দেখা যায় তা গঠন করা হয়েছে। এই সৃষ্টিতত্ত্ব প্লেটোর যুগের অন্যান্য সৃষ্টিতত্ত্ব থেকে ভিন্ন। তাঁর বস্তুতত্ত্ব—জ্যামিতিক পরমাণুবাদও তাঁর যুগের পরমাণুতত্ত্ব (বিশেষত দিমােক্রিতাস,লুসিপাসের তত্ত্ব) থেকে ভিন্ন। হিসেবে এখানে তুলে ধরা হয়েছে। হাইজেনবার্গ বলেছেন,…এমনকি এখনই বলা যেতে পারে যে,(বস্তুর রূপ নিয়ে) চূড়ান্ত উত্তরটি প্লেটোর তাইমিয়াস-এর কাছাকাছি কোনাে প্রত্যয় হবে। পাঠক তাইমিয়াস-এ ভিন্ন এক প্লেটোকে,সৃষ্টিতাত্ত্বিক,ব্রহ্মাণ্ডতাত্ত্বিক দার্শনিক,বৈজ্ঞানিক হিসেবে আবিষ্কার করবেন। অসমাপ্ত ক্রিতিয়াস সংলাপটি তাইমিয়াস-এর কুশীলবদের নিয়ে আদর্শ-রাষ্ট্র সম্পর্কিত এক আলােচনা। সেই রাষ্ট্রটি হলাে প্লেটোর আরেকটি কাল্পনিক রাষ্ট্র—আতলান্তিক মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপ আতলান্তিস। অসমাপ্ত এই সংলাপটিতে আমরা তার আদর্শরূপের বর্ণনা দেখতে পাই এবং একসময় এর অধিবাসীদের ‘ঐশ্বরিক গুণের’ ধ্বংসের কারণে জিউস যে তাকে ধ্বংস করেছিলেন তার সংবাদ পাই। আতলান্তিসের কিংবদন্তি পাশ্চাত্যের মনকে এমনভাবেই প্রভাবিত করেছে যে,তা নিয়ে ইতােমধ্যেই হাজারখানেক বই লেখা হয়েছে এবং বছরে অন্তত গােটা দশেক বই লেখা হচ্ছে।
বইয়ের নাম | প্লেটো : তাইমিয়াস ও ক্রিতিয়াস |
---|---|
লেখক | আমিনুল ইসলাম ভুইয়া |
প্রকাশনী | পাঠক সমাবেশ |
সংস্করণ | |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | |
ভাষা |