দৈনন্দিন জীবনের জরুরী মাসায়েল
দৈনন্দিন জীবনের জরুরী মাসায়েল বইটি সম্পর্কে যে কথা না বললেই নয়!
"তোমাদের নবী তো দেখছি তোমাদেরকে সব কিছুই শিক্ষা দেয়, এমনকি প্রাতঃকৃত্য সম্পাদনের পদ্ধতিও!” মুশরিকদের এমন ব্যঙ্গাত্মক উক্তির বাস্তবমূখী ও সমুচিত জবাবে হযরত সালমান ফারসী রাযিআল্লাহু আনহু বলেছিলেন- "হ্যাঁ, ঠিক তাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে প্রাতঃকৃত্য সম্পাদন করতে এবং ডান হাত দিয়ে ইস্তেঞ্জা করতে নিষেধ করেছেন।" মুসলিম, তিরমিযী
সুবেহ সাদেকের সময় ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া থেকে শুরু করে রাতে বিছানায় যাওয়া পর্যন্ত সময়ের সব কাজের যাবতীয় দিকনির্দেশনা ইসলামে। আছে। এমনকি ঘুমের ঘোরে ভয়ংকর কোনো স্বপ্ন দেখলে কী করতে হবে- সে বিষয়টিও একজন সাচ্চা মুসলমান নিশ্চয় জেনে থাকবেন।
ইহ ও পারলৌকিক সফলতার সোনার হরিণ কেবল ইসলামের ছায়া-শীতল আবহে-ই বিচরণ করে। সেটি পেতে হলে একজন মানুষকে অবশ্যই সেখানে সত্যিকার অর্থে প্রবেশ করতে হবে। অন্যথায় সুখ, সমৃদ্ধি ও সফলতা কেবলই মরিচিকা। একজন মানুষের সামনে আসা সকল বিষয়ের ধর্মীয় সমাধান একমাত্র ইসলামই নিশ্চিত করেছে। কিন্তু ভাগ্যহত মুসলমান সৌভাগ্যের রত্নভাণ্ডার হাত ছাড়া করে বসে আছে। নিজের ঘরে থাকা সম্পদের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে অন্যের দুয়ারে ধন্না দিচ্ছে।
ভারতীয় উপমহাদেশে 'কওমী মাদরাসা' নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলো মুসলমানদের সেই ধনভাণ্ডারগুলো আগলে রেখে আসছে জন্মলগ্ন থেকেই। ধর্মীয় জ্ঞান লাভ এবং নিজের জীবনে তা বাস্তবায়ন করতে কওমী মাদরাসার সন্তানরা উজ্জীবিত থাকে সদা-সর্বদা। জাগতিক প্রয়োজনকে পিছনে ফেলে, নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলে নিয়ে হেদায়েতের আলোক বলয়ে উম্মাহকে স্থান করে দিতে তারা বদ্ধপরিকর। সংক্ষিপ্ত কলেবরের এই পুস্তিকাটি সেই কর্মকাণ্ডেরই অংশ বিশেষ।
দৈনন্দিন জীবনের জরুরী মাসায়েল পুস্তিকাটি প্রকাশ নরাইবাগ ইসলামিয়া মাদরসার দাওরা ও হেফজ ফারেগীন ছাত্রবৃন্দের একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। তাছাড়া এটি একটি যুগোপযোগী প্রয়াসও বটে। একজন মুসলমানের দৈনন্দিন জীবনে করণীয় বিধিবিধান অত্যন্ত সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে এতে। প্রশ্ন- উত্তরের ধারায় পুস্তিকার বিন্যাস তাতে আরো সাবলীলতা ও নান্দনিকতার উন্মেষ ঘটিয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। ঈমান-আকীদা, নামাজ, রোযা, হজ, যাকাত, বিয়ে-শাদীসহ দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় মাসআলার সাথে সাথে আধুনিক বেশকিছু মাসায়েল স্থান করে নিয়েছে ক্ষুদ্র কলেবরের এই পুস্তিকায়।
মাওলানা মুহাম্মাদ হাসান নদবী রচিত উর্দুভাষায় ব্যাপকভাবে সমাদৃত 'রোজে মাররা কী শরয়ী মাসায়েল' বক্ষমান পুস্তিকার মূল উপাদান। কলেবর বৃদ্ধি, সময় সল্পতা ও অনিবার্য নানা কারণে মূল কিতাবটির পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ এই সংস্করণে সন্নিবেশিত হয়নি। মানোন্নয়ন ও বিষয়বস্তু পূরণের তাগিদসহ সঙ্গত অনেক কারণেই আরো কিছু কিতাবের উপাদান এতে যুক্ত করা হয়েছে।
সেরেতাজ হযরত মুফতী মুহাম্মাদুল্লাহ মুঈনী সাহেব দা. বা.-এর বলিষ্ঠ দিক নির্দেশনা ছিলো একাজের প্রাণ। আর আল্লাহ তা'আলার তৌফিক ছিল তাতে স্পন্দন। স্বল্পসময়ে পুস্তিকাটির কাঁচামাল সরবরাহ ও কাঠামো দাঁড় করানোর জন্য মাদরাসার আসাতিজায়ে কেরামের ভূমিকা ছিল সত্যিই প্রশংসনীয়। সম্পাদনার লাল কালির কাঁটাবন থেকে যে সব স্নেহাস্পদ ছাত্রবৃন্দ পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধার করে দিয়েছে তাদের কথা স্মরণ না করলেই নয়। সম্পাদনায় যারা নানাভাবে সহযোগীতা করেছেন তাদের কথাও কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করছি। আল্লাহ তা'আলা সকলকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।
ভুল মানুষের স্বভাবগত একটি বিষয়। মূদ্রণ প্রমাদ ও অন্য যে কোন অসঙ্গতি নজরে পড়লে আমাদেরকে অবগত করে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি। পুস্তিকাটি দৈনন্দিন জীবনে দ্বীনী ভাই- বোনদের আমলের সহযোগী হলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে বলে মনে করি। আল্লাহ তা'আলা আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু কবুল করুন এবং লেখক-পাঠক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম প্রতিদান ও আমলের তৌফিক দান করুন। আমীন!
বিনিত
মুহাম্মাদ রাশিদুল হক
নরাইবাগ ইসলামিয়া মাদরাসা ডেমরা, ঢাকা-১৩৬০
বইয়ের নাম | দৈনন্দিন জীবনের জরুরী মাসায়েল |
---|---|
লেখক | মাওলানা মুহাম্মাদ হাসান নদবী |
প্রকাশনী | আল কাউসার প্রকাশনী |
সংস্করণ | প্রথম প্রকাশ, ২০১৪ |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | 112 |
ভাষা | বাংলা |