বই : মুঘলযুগে কৃষি অর্থনীতি ও কৃষক বিদ্রোহ

প্রকাশনী : দিব্য প্রকাশ
মূল্য :   Tk. 0.0

“মুঘলযুগে কৃষি অর্থনীতি ও কৃষক বিদ্রোহ” বইটির ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ

লেখার গােড়াতেই কতকগুলাে সীমা টেনে নেওয়া দরকার। এখানে মুঘলযুগ বলতে প্রধানত বােঝানাে হয়েছে-আকবর থেকে আওরঙ্গজেবের শাসনকালের সময়সীমা, অর্থাৎ খ্রী. ১৫৫৬ থেকে ১৭০৭ পর্যন্ত। ‘ভারত’ বলতে সাধারণত ধরা হয়েছে দাক্ষিণাত্যের কয়েকটি রাজ্য, অর্থাৎ বেরার, বিদর, আহমদনগর এবং বর্তমান মহারাষ্ট্র সমেত উত্তর-ভারতের সমতলভূমি ও আসাম বাদে পূর্ব-ভারত। তবে ব্যাখ্যার খাতিরে বা উপকরণের সন্ধানে সময়সীমা বা ভৌগােলিক সীমার মধ্যে আলােচনা আবদ্ধ থাকবে না। অন্যান্য অঞ্চল থেকে ও অষ্টাদশ শতকের ইতিহাস থেকেও আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি। এই দুটি সীমা মেনে নেবার কারণ হচ্ছে, এই দুই সীমার মধ্যে মুঘল কৃষি-অর্থনীতির স্বকীয় ও চরম বিকাশ হয়েছিল। আবার এই সময়ে ভারতীয় অর্থনীতিতে অ-কৃষিজাত উৎপাদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে স্বীকার করে নিয়েও একথা স্বচ্ছন্দে বলা যেতে পারে : মুঘল অর্থনীতির মূলভিত্তি ছিল কৃষি। কারণ কৃষিই ছিল জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের উপজীবিকা এবং উদ্বৃত্ত সামাজিক শ্রমের বিপুল সম্পদ কৃষি থেকে সংগৃহীত হতাে। শােষক ও শােষিতের সম্পর্কের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল কৃষি। তাই বর্তমান রচনার মধ্যে কৃষি-অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা এসেছে শুধু আলােচনা প্রসঙ্গে। “শ্রেণী” শব্দটি প্রধানত মার্কসীয় অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। উৎপাদন-পদ্ধতিতে উপকরণের মালিকানার ওপর ভিত্তি করে এক ব্যক্তির সঙ্গে অপর ব্যক্তির সামাজিক সম্পর্ক নির্ধারিত হয়। এই সম্পর্ক উৎপাদন-ব্যবস্থায় সেই ব্যক্তি বা গােষ্ঠীর স্থান নির্ণয় করে; সমষ্টিগতভাবে অনুরূপ বহু ব্যক্তি বা গােষ্ঠীর সামাজিক অবস্থানকে শ্রেণী বলা হয়।
এখন বর্তমান প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য, তত্ত্বের চেয়ে তথ্যের ওপর বেশি গুরুত্ব আরােপ করা। তাই বলে প্রথম দিকটা একেবারে বাদ দেওয়া হয়নি। প্রবন্ধের পর্বভাগ। মােটামুটিভাবে পাঁচটি : মুঘলযুগে কৃষি-অর্থনীতিতে গ্রামীণ সমাজের অস্তিত্ব নির্ণয় করা ও স্বরূপ নির্ণয় করা; এবং বিভিন্ন শ্রেণীর উৎপত্তি, অবস্থান ও অধিকার বিচার করা; বিভিন্ন শ্রেণীর পারস্পরিক সম্পর্ক বিচার করার পর দ্বন্দ্বের বৈরী ও অবৈরীমূলক দিক আলােচনা করে অর্থনীতিতে সামাজিক সংঘর্ষের একটি ব্যাখ্যা দেওয়া; কৃষি-অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য কতকগুলাে বিষয় আলােচনা করা; সবশেষে একটা সামগ্রিক মূল্যায়ন করা।
এই প্রবন্ধের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে একটু কৈফিয়ত দেওয়া প্রয়ােজন। ব্রিটিশশাসনে ভারতীয় অর্থনীতির উন্নতি বা অবনতি নিয়ে বহু পুরনাে বিতর্ক চালু আছে। এখানে সুনিশ্চিত রায় দেবার আগে মুঘল অর্থনীতির অবস্থা জানা একটা আবশ্যিক শর্ত। আবার সাম্প্রতিককালে মার্কস-এর ‘এশিয়াটিক সমাজ’-এর মডেল নিয়ে ভারতীয় বুদ্ধিজীবীমহলে প্রচুর আলােচনা চলছে। ভারতীয় ইতিহাসচর্চায় এই তত্ত্বের যথার্থতা কতদূর তথ্যসহযােগে সমর্থিত, সেটার বিচারে মুঘল অর্থনীতির একটি চিত্র বােধহয় জানা প্রয়ােজন। তৃতীয় বিচার্য বিষয় হচ্ছে যে, মুঘল অর্থনীতিতে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার কোনাে বীজ উপ্ত ছিল কিনা, থাকলে ব্রিটিশের দ্বারা তার বিকাশ কতটা ব্যাহত হয়েছে ও অথবা ব্রিটিশশাসনে আদৌ নিচের দিকে কোনাে গুণগত পরিবর্তন এসেছিল কিনা। এদিক থেকেও বােধহয় প্রাক্-ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক কাঠামাে না জানলে কোনােকিছুই ঠিক করা যাবে না। সবার শেষে, সমাজ-পরিবর্তনের জন্যে বর্তমান ভারতীয় রাষ্ট্রের চরিত্র-নির্ধারণ অন্যতম প্রধান কর্তব্য। এই প্রচেষ্টায় কোনাে কোনাে রাজনৈতিক দল ভারতীয় রাষ্ট্রকে প্রায়ই ‘আধা-সামন্ততান্ত্রিক’ বলে ঘােষণা করেন। ভারতীয় অর্থনীতির একাংশ প্রাক-ঔপনিবেশিক ব্যবস্থারই জীইয়ে রাখা ঐতিহ্যকে বহন করছে, সেরকম ইঙ্গিতই এই দলগুলির বিশ্লেষণে পাওয়া যায়। শােষণের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বুঝতে গেলে উৎসের সন্ধানে যাওয়া আবশ্যক। এই আবশ্যিকতার তাগিদই বর্তমান আলােচনার সবচেয়ে বড় প্রাসঙ্গিকতা। >

বইয়ের নাম মুঘলযুগে কৃষি অর্থনীতি ও কৃষক বিদ্রোহ
লেখক গৌতম ভদ্র  
প্রকাশনী দিব্য প্রকাশ
সংস্করণ
পৃষ্ঠা সংখ্যা
ভাষা

গৌতম ভদ্র