চরিত্রশুদ্ধি
বন্ধু নির্বাচনের আবশ্যক শর্তাদি
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ব্যক্তি তার বন্ধু যে পথে আছে সেই পথের অনুগামী হয়। তাই তোমাদের প্রত্যেকে যেন খেয়াল করে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছে।’
সবাই কিন্তু বন্ধু হওয়ার যোগ্য নয়। কোনো ব্যক্তির সাথে কেউ সময় পার করতে চায়, তার মাঝে অবশ্যই কিছু আকর্ষণীয় গুণের সমাবেশ থাকা চাই। কেউ কীভাবে বন্ধু থেকে উপকৃত হওয়ার আশা রাখে, তার ওপর এই গুণগুলো নির্ভর করে। এগুলো কোনো পার্থিব বিষয়ও হতে পারে। যেমন সম্পদ, পদমর্যাদা অথবা নিছক দেখা ও আলাপের ফলে আকর্ষণ। এখানে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা উদ্দেশ্য নয়।
আবার কোনো দ্বীনি বিষয়ও হতে পারে। কেউ বন্ধুর দ্বীনদ্বারিতা থেকে নানাভাবে উপকৃত হতে পারে। তার ইলম ও আমল থেকে উপকৃত হতে পারে। বন্ধুর অবস্থান তাকে অন্তর বিনষ্টকারী ও ইবাদতে বিক্ষিপ্ততা সৃষ্টিকারীদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করতে পারে। বন্ধুর সম্পদ রিযক অন্বেষণে সময় নষ্ট করা থেকে নিষ্কৃতি দিলে তা থেকেও সে উপকার পেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে সে তার সাহায্য নিতে পারে। এভাবে বন্ধু হয় দুর্দিনের সম্পদ এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে শক্তি। আখিরাতে সে তার শাফাআতের আশা করার মাধ্যমেও উপকৃত হয়। এক সালাফ বলেছেন—বেশি বেশি ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলো, কারণ প্রত্যেক মুমিন শাফাআতের অনুমতি পাবে।
এ প্রতিটি ফায়দালাভের জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করা আবশ্যক। সাধারণভাবে একজন ভালো বন্ধুর মাঝে পাঁচটি গুণ থাকতে হবে। তাকে বুদ্ধিমান ও উত্তম আখলাকের অধিকারী হতে হবে। নির্লজ্জ গুনাহগার, বিদআতি অথবা দুনিয়ালোভী হওয়া যাবে না।
আকল হলো পুঁজি। মূর্খের সাহচর্যে কোনো কল্যাণ নেই। সে সাহায্য করতে চাইলেও শেষে বিপদ ডেকে আনে। আকলবান তো ওই ব্যক্তি, যে নিজে বা কেউ কিছু বুঝিয়ে বললে ওই জিনিসের হাকিকত অনুধাবন করতে পারে। আর সুন্দর আখলাক অপরিহার্য বিষয়। বহু মানুষের আকল আছে কিন্তু ক্রোধ ও প্রবৃত্তির কাছে সহজেই হেরে যায়। এ ধরনের ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্বে কোনো কল্যাণ নেই। আর নির্লজ্জ গুনাহগার তো আল্লাহকে ভয়ই করে না। যে আল্লাহকে ভয় করে না, তার অনিষ্ট থেকে কেউ নিরাপদ নয়। তাকে বিশ্বাস করা যায় না। আর বিদআতির ব্যাপারে ভয় যে, তার সাহচর্যের ফলে একসময় তার বিদআতগুলো মেনে নেবে।
উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘সত্যবাদী ভাইদের সাহচর্য গ্রহণ করো এবং তাদের ডানার নিচে অবস্থান করো। স্বাচ্ছন্দ্যের সময় তারাই শোভাবর্ধন করে আর বিপদের সময় তাদেরকেই কাজে লাগে। ভাইদের প্রতি সুধারণা করো, যতক্ষণ না সে এমন কিছু করে, যা তোমাকে রাগায়। শত্রু থেকে দূরে থাকো এবং অবিশ্বস্ত বন্ধুর ব্যাপারে সতর্ক থাকো। আর মুত্তাকি ছাড়া কেউই তো বিশ্বস্ত নয়। গুনাহগারের সাথি হয়ো না। তার দুরাচার থেকে শিক্ষা নাও। তাকে তোমার গোপন বিষয় বোলো না। বিভিন্ন বিষয়ে মুত্তাকিদের সাথে পরামর্শ করো।’
ইয়াহইয়া ইবনু মুয়ায বলেছেন, ‘এমন বন্ধু থাকা কী শোচনীয়, যাকে বলে দিতে হয় তোমার দুয়াতে আমাকে স্মরণ রেখো অথবা যার সাথে তোষামোদ করে চলতে হয় কিংবা অজুহাত পেশ করা লাগে।’
একবার একদল লোক হাসান বাসরির কাছে গিয়ে তাঁকে ঘুমন্ত পায়। একজন তাঁর বাড়িতে রাখা ফল খেতে শুরু করে। তিনি দেখতে পেয়ে বললেন, ‘আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন। ওয়াল্লাহি, সত্যিকারের ভাইরা তো এমনই হয়!’
আবু জাফর একবার তাঁর সাথিদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘তোমাদের কেউ কি কখনো তার ভাইয়ের পকেটে হাত দিয়ে যা মন চায় নিয়েছে?’ তাঁরা বললেন—না তো। তিনি বললেন—তাহলে তোমরা আসলে প্রকৃত ভাই নও, যেমনটা দাবি করো।
ফাতহ আল-মাওসিলি একবার ঈসা আত-তাম্মার নামের এক বন্ধুকে দেখতে গিয়েছিলেন, কিন্ত তিনি বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর খাদিমাকে বললেন—আমাকে তাঁর টাকার থলে এনে দাও। সে থলে নিয়ে এলে তিনি সেখান থেকে দুই দিরহাম নিলেন। ঈসা বাড়িতে ফিরলে খাদিমা বিষয়টি জানায়। ঈসা বললেন—তুমি যদি সত্য বলো, তাহলে মুক্ত। তারপর তিনি টাকার থলে দেখলেন। দেখা গেল সে সত্য বলেছে। তারপর তিনি তাকে মুক্ত করে দিলেন।
বইয়ের নাম | চরিত্রশুদ্ধি |
---|---|
লেখক | ইমাম ইবনে কুদামা আল-মাকদিসি |
প্রকাশনী | ইলমওয়েব |
সংস্করণ | |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | |
ভাষা |