ছোটদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আজকের কিশোর,তরুণ ও যুবসমাজের জন্য প্রিয় নবী (সা.)-এর আদর্শ জীবনের অপরিহার্য বিধান হিসেবে অগ্র গণ্য। কারণ বর্ত মান সমাজে ধর্মান্ধতা,কুসংস্কার,হানাহানি,জঙ্গীবাদ,অরাজকতা,প্রতিহিংসা,মিথ্যা,জালিয়াতি,চুরি-ডাকাতি ও দুর্নীতি করে রাতারাতি সম্পদশালী হওয়ার মনোভাব মুসলমান জাতিকে নিম্নস্তরে নিমজ্জিত করেছে। যে জাতি প্রিয় নবী (সা.)-এর আদর্শ ও ধর্ম পালন করে বিশ্বের সকল জাতির উপর প্রভুত্ব করার দাবিদার,আজ সে জাতির অধঃপতন বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছে। বিশেষ করে চিন্তাশীল গবেষক,নিবেদিতপ্রাণ মুসলিম ও ধর্মপথের সঠিক দিশারীগণের দুশ্চিন্তা ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মুসলিম জাতির এই অধঃপতনের বিষয়টি। প্রিয় নবী (সা.)-এর প্র কৃত আদর্শ,অনুপম চরিত্র ও তাঁর প্রিয় সাহাবা আজমাঈনগণের ত্যাগ ও আনুগত্যের মহান শিক্ষা-দীক্ষায় মুসলমান জাতি আজও নিজেদের গড়ে তুলতে পারেনি। তাইতো মুসলমান হয়েও প্রিয় নবীর অনুপম আদর্শ ও সঠিক শিক্ষা আমাদের সমাজ নির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারেনি। আজ সর্ব ত্রই ধর্মে র নামে অধর্ম,জঙ্গীবাদ,অন্ধবিশ্বাস ও নির্মম হত্যাযজ্ঞ যেন ধর্মে রই একটি অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ আরবী বিদ্বান হয়েও প্রিয় নবী (সা.)-এর আদর্শবিচ্যুত এ শিক্ষাই আজ মুসলমানদেরকে দিয়ে যাচ্ছে ধর্মে র অপশিক্ষায় শিক্ষিত এক জাতীয় ধার্মিক গোষ্ঠী। এই অপশিক্ষা তাদের মন-মগজ থেকে উৎসারিত হয়ে পৃথিবীর নানা দেশে জঙ্গী ও আধুনিক সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিয়েছে। যা কোনো মুসলমানের কাম্য হতে পারে না। তাই আজকের কিশোর,তরুণ ও যুবসমাজের প্রিয় নবী (সা.)-এর আদর্শিক জীবন পদ্ধতি,অনুসৃত নীতি,ত্যাগ,চারিত্রিক গুণাবলি,সত্যবাদিতা,অসাম্প্র দায়িকতা,সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ ও মুক্তির সনদসহ ব্যক্তি জীবনের উৎকর্ষতার জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্যরূপে গৃহীত। সমাজ সংস্কারক ও সত্য প্রচারক রূপে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন বিশ্বের অতুলনীয় দৃষ্টান্তের অধিকারী। সমাজের সমস্ত অন্ধকার বিদূরিত করে আলোর দিশারী রূপে তিনি মানবতার মহান চেতনায় সকলকে উদ্বুদ্ধ করতেন সর্ব দাই। সমাজের সকল কুসংস্কার ও অরাজকতা দূরীকরণের জন্য তাঁর ভূমিকা ছিল বিশ্বে বিরল। তৎকালীন সময়ে মক্কার কাবাগৃহে কালো পাথরের অবস্থান,ফিজর যুদ্ধের করুণ কাহিনি এবং কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া ইত্যাদি ঘটনারাশি বহু আরববাসীকেই চিন্তিত করেছিল। এ সময় মানবতার এ মহান দিশারীর আগমন আরববাসীকে এমন এক পথ ও মতের সন্ধান দিয়েছিল যা তাদের জীবন ব্যবস্থাকে শান্তি ও চিরকল্যাণের স্রোতে ভাসিয়ে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও রাসুলের আদর্শকে আকড়ে ধরার অনুপম শিক্ষা দিয়েছিল। এতদিন যারা ছিল সর্বদা যুদ্ধ ও অরাজকতায় লিপ্ত আজ প্রিয় নবী (সা.)-এর আহ্বানে তারা খুঁজে পেল শান্তি,সম্প্রীতি,ভ্রাতৃত্ব ও কল্যাণের সাথে বেঁচে থাকার আধুনিক ধর্মমত ইসলাম। মহানবী (সা.) বিশ্ব মানবতার জন্য এক অনন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে যান। তেমনি একটি ঘটনার কথা এখানে উল্লে খ করা হলো,নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বয়স যখন পঁয়ত্রিশ বছর,তখন কুরাইশগণ কাবাশরিফ পুননির্ম াণে হাত দিল। যখন হাজরে আসওয়াদ যথাস্থানে স্থাপনের সময় আসল,তখন তাদের মধ্যে বিবাদ দেখা দিল। কোন্ গোত্রের লোকেরা এটি যথাস্থানে স্থাপন করার সৌভাগ্য ও কৃতিত্ব অর্জন করবে তা-ই ছিল বিবাদের মূল কারণ। এ নিয়ে গৃহযুদ্ধ বাধার মতো অবস্থার সৃষ্টি হলো। তারা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিল,যে ব্যক্তি ভোরবেলায় সেখানে প্রথম প্রবেশ করবে সে এ বিষয়ে ফয়সালা দেবে। দেখা গেল যে,ভোরবেলায় সবচেয়ে প্রথমে যিনি আসলেন তিনি হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’ সকলে খুশি হলো। বলে উঠল,‘আল-আমীন এসেছে।’ তাঁকে সকলেই বিচারক হিসাবে মেনে নিল। তিনি একটি চাদর বিছিয়ে হাজরে আসওয়াদ সেখানে রেখে বললেন,‘প্রত্যেক গোত্রের মনোনীত একজন ব্যক্তি চাদরের কিনারা ধরে হাজরে আসওয়াদ বহন করে যথাস্থানে নিয়ে যাবে।’ এতে করে সকল গোত্রই এই মহৎ কাজের অংশীদার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৯ ১০ ছোটদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ হবে। সকলে তাই করল। এরপর তিনি নিজ হাতে পাথরটি উঠিয়ে যথাস্থানে রাখলেন। বিবাদ মিটে গেল। সকলেই খুশি হলো। আমরা সকলেই জানি প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) দুনিয়ার মানুষের জন্য রহমত স্বরূপ আগমন করেছিলেন। তিনি মানবতার পূর্ণ আদর্শ এবং দুনিয়ার একজন বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব। তিনি বিশ্বের মানুষের শান্তির জন্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক। তাঁর প্র শংসা মুসলিম এবং অমুসলিম সকল মনীষীদের কণ্ঠেই উচ্চারিত হয়েছে,‘মুহাম্মদ (সা.) এমন একজন যাঁর আগমন না ঘটলে বিশ্বজগত সত্যিকার অর্থে অপূর্ণ থেকে যেত। তিনি বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রে ষ্ঠ মহামানব।’ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নত হচ্ছে একটি জীবন্ত আদর্শ। এ আদর্শ বিশ্বে র সকল প্রাণীর জন্য একটি নিরাপত্তামূলক রক্ষাকবচ এবং একটি বাস্তব ঘটনাবহুল কর্মসূচি। এ আদর্শের আলোকে মানুষের কথা ও কাজ নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হবে। মহান আল্লাহপাক বলেন,‘নিশ্চয়ই প্রত্যেকের জন্যে আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ যারা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রহমত আশা করেন এবং আখেরাতে পুরস্কারের আশা রাখেন তারা যেন আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়শা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,‘রাসুলুল øাহ (সা.)-এর চরিত্র কেমন ছিল?’ তিনি উত্তরে বলেছিলেন,‘কুরআনই ছিল তাঁর চরিত্র।’ সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কর্মকা-ে আল্লাহর মনোনীতি নিয়মনীতি অনুসরণ করে দুনিয়া থেকে মুক্তি পেতে চায়,তার জন্যে আল্লাহ্র রাসু ল (সা.)-এর অনুসরণ করা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। বর্তমানে মুসলমানেরা আল্লাহর রাসুলের পথ থেকে দূরে সরে গেছে,ফলে মূর্খতা ও অধঃপতনের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। একমাত্র রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করলেই তারা মুক্তি পেতে পারে। এ আদর্শে র মধ্যেই রয়েছে মানুষের মুক্তি ও কল্যাণ। কারণ আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর চরিত্রই হচ্ছে আল্লাহপাকের কিতাব তথা কুরআনের বাস্তব রূপ। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতির সাহায্যে আলোচনার পাশাপাশি তাঁর বিশাল কর্মজীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশবিশেষ কিশোর,তরুণ ও যুবসমাজের উপযোগী শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে এ গ্রন্থে র মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। যা তাদেরকে আদর্শ ও পরিপূর্ণ মানবরূপে গঠন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও সকলের জন্য অনুকরণীয় উত্তম আদর্শ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিশাল কর্মময় জীবনেতিহাস পাঠক মহলে সমাদৃত হবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। আমি সকলের ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মঙ্গল কামনা করছি। আল্লাহ হাফেজ।
বইয়ের নাম | ছোটদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম |
---|---|
লেখক | মোস্তাক আহমদ |
প্রকাশনী | কলি প্রকাশনী |
সংস্করণ | |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | |
ভাষা |